কোটা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে: ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করে ছাত্রলীগ। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং কোটা ইস্যুর যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ইতিবাচক সমাধানের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এতে বলা হয়, কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে সরকারি চাকরিতে চলতি সময়ে আর কোনো কোটাব্যবস্থা প্রচলিত নেই। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে কোটাব্যবস্থা তুলে দেয়ায় নারীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়, যা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অন্তরায় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কোটা উঠে যাওয়ার পর উন্নয়নের মূলধারা থেকে নারীরা ছিটকে পড়েছেন। অন্যদিকে জেলা কোটা না থাকায় বঞ্চিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল।

একইভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। সরকারি চাকরির প্রতিটি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার প্রতিটি ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। তাই ‘কোটা না মেধা’ সেøাগানটি একটি ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। এখানে মেধার বিপরীতে মেধার প্রতিযোগিতায় সমাজের অনগ্রসর অংশকে কিছুটা এগিয়ে দেয়া হয়, যা পুরোপুরি ন্যায় ও সংবিধানসম্মত।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় পক্ষভুক্ত হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে না ধরে আন্দোলনের নামে প্রকৃতপক্ষে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চলছে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক পদক্ষেপ নয়। এই আন্দোলনের কারণে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। হাসপাতালে রোগীদের যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয় সম্পদ (যেমন তেল, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন) দুরূহ হয়ে উঠছে। কর্মজীবী-শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন-আন্দোলন খেলা ও ‘হিরোইজম’ প্রদর্শনের এই মানসিকতার কারণে দেশের শিক্ষিত তরুণসমাজের প্রতি সাধারণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

এমন অবস্থায় কোটা বাতিল বা সংস্কারের জন্য দেশব্যাপী যে আন্দোলন হচ্ছে, সে সম্পর্কে পুনর্ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। নিজেদের দাবি ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আন্দোলনকারীরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যেন সাধারণ জনগণ বনাম শিক্ষার্থী এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোটাব্যবস্থায় একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান এবং সংস্কার আনা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোনো হঠকারিতা বা তাড়াহুড়া নয়। কোনো অবরোধ বা জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নয়। কোটাব্যবস্থার সময়োপযোগী সংস্কার আনার জন্য একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন। এমন উদ্যোগে দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজš§ তাদের মেধা-মনন দিয়ে একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রণয়নে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান না জানিয়ে, এমনকি আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই কেন এই অনিঃশেষ আন্দোলন?

ছাত্রলীগ বলেছে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে, বর্তমানে যা বিচারাধীন বিষয়। একটি বিষয় যখন আদালতের গণ্ডিতে প্রবেশ করে, তখন তার সমাধান আইনের কাঠামোতেই হতে হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ কথা কি আন্দোলনকারীরা জানেন না? পাশাপাশি স্থিতাবস্থার আদেশের পরবর্তী ধাপগুলো পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কেন জনবিরোধী অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে, তা মানুষ জানতে চায়। জনগণকে জিম্মি করে তথাকথিত আন্দোলন চালানো হলে আন্দোলনকারীদের এটিও মনে রাখা দরকারÑদেশের আইন বিভাগ সার্বভৌম, বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নির্বাহী বিভাগ জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত। তাই অহেতুক কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনের কাছে কেউ নতি স্বীকার করবে না।

আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম পরিচালনা কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না বলে মন্তব্য ছাত্রলীগের। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সড়ক অবরোধসহ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে ফিরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, কোটাব্যবস্থা বাতিল করেছে সরকার। উচ্চ আদালতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহালের জন্য কাজ করছেন সরকারের আইনজীবীরা। তাই স্বাভাবিক আইনগত প্রক্রিয়ায় কোটাসংক্রান্ত জটিলতার যৌক্তিক সমাধান আসার জন্য শিক্ষার্থীদের সব রকম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। আইনি প্রক্রিয়াতেই এর চূড়ান্ত, স্থায়ী, যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের দিকে এগোতে হবে। আন্দোলনকারীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে, এটিই সবাই প্রত্যাশা করে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দেশের শিক্ষার্থী-সমাজের পাশে অবস্থান করছে। ছাত্রলীগ আদালতের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের নামে দেশের শিক্ষার্থী-সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়াবে ছাত্রলীগ।

সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক ও আইনগত সমাধান চায়। কিন্তু রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীরা এই আন্দোলনকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। আন্দোলনকে প্রলম্বিত করা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ছাড়া কিছু নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই যৌক্তিকভাবে দাবিদাওয়া তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে। তাদের কাছে প্রশ্নÑপ্রশাসনে ‘ভাইয়া ক্যাডার’ কে চালু করেছিল? পিএসসিকে কে ‘হাওয়া ভবনের এক্সটেনশনে’ পরিণত করেছিল? তাদের শাসনামলে দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়া কোনো চাকরি পাওয়া সম্ভব হতো না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০