নিজস্ব প্রতিবেদক : পেঁয়াজের দাম প্রতি সপ্তাহেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আগের দুই সপ্তাহে ১০ টাকা করে বাড়লেও চলতি সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়েছে ২০ টাকা। আর বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও ডিমের দামও বেড়েছে। পেঁয়াজের বাড়তি দামের প্রসঙ্গে বিক্রেতারাই বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। পেঁয়াজের দাম এই মুহূর্তে কমার কোনো সম্ভাবনাও নেই, বরং আরও বাড়তে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন দাম বৃদ্ধিতে বাজার করতে আসা ক্রেতারা প্রকাশ করছেন অসন্তোষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে ১০ থেকে ২০ টাকা করে। এর মধ্যে গত ২৮ জুন আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায়; ছোট আকারের পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা করে। ক্রমান্বয়ে গত ৫ জুলাই আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায়; এর মধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং বড় সাইজের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। আর গতকাল শুক্রবার আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট ও বড় দুই আকারের পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতেই। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বাড়লেও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে একলাফে ২০ টাকা।
পেঁয়াজের বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সিন্ডিকেট। তারা পেঁয়াজ কিনে স্টক করে রেখে দেয়। তারপর বাজারে টান (সংকট) ফেলে বেশি দামে বিক্রি করে। এ সময় আরেক বিক্রেতা হানিফ বলেন, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশে আসছে বলে এখন ১০০ বা ১২০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারছে মানুষ। না হলে এতদিনে ২০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ খাওয়া লাগত। আর এই মুহূর্তে পেঁয়াজের কমবে না বলেই মনে হচ্ছে। বরং আরও বাড়তে পারে।
এছাড়া লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০, বগুড়ার আলু ৭০, দেশি রসুন ২০০, চায়না রসুন ১৮০, চায়না আদা ৩২০, ভারতীয় আদা মান ভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় সব ধরনের লাল ও সাদা আলুর দাম উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত রয়েছে। আর বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ১০ টাকা। আর চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
কেবল পেঁয়াজের দামই না বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে। গতকাল বাজারে ভারতীয় টমেটো ১৯০ দেশি টমেটো ২০০ টাকা, দেশি গাজর ১০০, চায়না গাজর ১৮০, লম্বা বেগুন ১০০, সাদা গোল বেগুন ১০০, কালো গোল বেগুন ১২০, শসা ১২০, উচ্ছে ১২০, করলা ১৪০, কাঁকরোল ১০০, পেঁপে ৬০, ঢেঁড়স ৮০, পটোল ৬০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা ৮০, ধুন্দল ৮০, ঝিঙা ৮০, বরবটি ১২০, কচুরলতি ১০০, কচুরমুখী ১০০, মিষ্টিকুমড়া ৪০, কাঁচামরিচ ৩০০, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, চালকুমড়া ৭০, ফুলকপি ৭০, বাঁধাকপি ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচাকলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া উচ্চদামে অপরিবর্তিত বেশ কিছু সবজির দাম। ভারতীয় ও দেশি টমেটোর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ৬০ টাকা। চায়না গাজরের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ টাকা। কাঁকরোল, উচ্ছে ও করল্লার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০, ২০ ও ৪০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। লাউ ও চালকুমড়ার দাম বেড়েছে ৩০ ও ১০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহের ৬০ টাকা দামের একটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা রুবেল বলেন, বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি হচ্ছে যেরকম সবজি আসার কথা সেটা আসছে না। তাই এখন দাম বেড়েছে। আরেক বিক্রেতা শহিদুল বলেন, বর্ষাকালে বন্যা হয় তখন এমনিই সবজির দাম বেড়ে যায়। শীতকালে সবজির দাম কম থাকে।
এ সময় বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছরই তো বেশি দামে সবকিছু কিনতে হচ্ছে। আলাদা করে আর বর্ষাকালের কথা বলে লাভ কী! আর ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে মনে হয় সারা বছরই তারা কোনো না কোনো ক্ষতির মুখে আছেন। তো এত যখন তাদের সমস্যা তাহলে ব্যবসা ছেড়ে অন্য কাজ করে না কেন! তাদের খালি লসই হয়, আর আমরা আছি মহাসুখে!
আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খরচ খালি বাড়েই। বেতন তো বাড়ে না। সবকিছুর দাম বেশি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।’
এদিকে বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর রুই মাছ ৩৬০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, কাঁচকি মাছ ৫০০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ৩০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ১ হাজার, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১২০০, বোয়াল মাছ ৭০০ থেকে ১২০০ এবং রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বাজারে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা, কক মুরগি ২৬০ থেকে ২৬০, লেয়ার মুরগি ৩৩০, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। তবে কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা, দেশি মুরগির ৩০ টাকা ও লেয়ার মুরগির দাম ৩০ টাকা কমেছে।
এদিকে মুদি দোকানের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। গতকাল প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০, ছোট মসুরের ডাল ১৩৫, মোটা মসুরের ডাল ১১০, বড় মুগ ডাল ১৬০, ছোট মুগডাল ১৮০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১৩০, ডাবলি ৮০, ছোলা ১১৫, মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭, খোলা সয়াবিন তেল১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১ হাজার ৩৫০, খোলা ঘি ১ হাজার ২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫, খোলা চিনি ১৩০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি প্রতি কেজি ৪ হাজার ৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০, লবঙ্গ ১ হাজার ৬০০, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ এবং কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।