সহিংসতায় ডিএমপির ৮০ স্থাপনায় ভাঙচুর-আগুন, ক্ষতি ৯ কোটি টাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ৮০টি স্থাপনা ও কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৯ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ৮০টি স্থাপনার মধ্যে ৬৯টি পুলিশ বক্স। এগুলোর সবগুলোই আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিকের উপ-কমিশনারের অফিস ও সহকারী কমিশনারের অফিস পোড়ানো হয়েছে। ৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব প্রাথমিক, সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।’

পুলিশের এসব স্থাপনাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরসকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৫৪টি মামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
‘গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ৩৮০ জনকে। মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়তে পারে,’ বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জুনের শেষে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা ফের মাঠে নামে মাসের শুরুতে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল মাসের প্রথম দিন থেকে। ধীরে আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। এই দাবিতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি আসে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ দুজন, চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন ও রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয় সহিংসতায়।

এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। রাজধানীর বাড্ডা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর আসে। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা শুরু হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব স্টেশন ও মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও ভাঙচুর হয়।

সেদিন থেকেই ঢাকার উত্তরার পথে পথে, ধানমন্ডির শংকর ও সোবহানবাগ এলাকায়, মোহাম্মদপুর ও বসিলায় এবং মিরপুর এলাকায় গোলাগুলির খবর আসে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর পুলিশ বক্সের পাশে পুলিশের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর পুলিশ বক্সের পাশে পুলিশের মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়।

ঢাকার বাইরে নরসিংদী কারাগারে হামলা করে ফটক ভেঙে ৮৫টি অস্ত্র লুট করা হয়। সন্দেহভাজন ৯ জঙ্গিসহ পালিয়ে যায় আট শতাধিক বন্দি। এসব অস্ত্রের মধ্যে ২০টি পরে উদ্ধার হয়, গুলি উদ্ধার হয়েছে এক হাজারের কিছু বেশি। রামপুরা, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এবং কদমতলী এলাকা পাঁচ দিন ধরে ছিল অচলপ্রায়। পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘাতে ব্যাপকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের তথ্য আসে।

এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি হয়। তবে প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা করে কারিফিউ শিথিল করা হয়। এর তিন দিন পর নিয়ন্ত্রণে আসে যাত্রাবাড়ী ও রামপুরা-বাড্ডা এলাকা। এছাড়া রোববার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসার পর গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস-আদালত খোলার সিদ্ধান্ত আসে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০