খাদ্যে ভেজাল বেড়েই যাচ্ছে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল বেড়েই যাচ্ছে। ভেজালযুক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে। মনুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিনিয়ত ভেজালযুক্ত খাবার খাচ্ছে। মাথাপিছু স্বল্প আয়ের কারণে সাধারণ মানুষ ভেজাল জেনেও সস্তায় সব জিনিস কিনতে চায়, তাছাড়া বেশি দামের জিনিস হলেই যে খাঁটি হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই সাধারণ মানুষ ভেজাল জেনেও প্রতিদিন অবাধে এই খাদ্য গ্রহণ করছে।

ভেজাল খাদ্যের সরবরাহ এত বেড়ে গেছে যে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরও এই সমস্যা রোধ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ভেজাল খাদ্যগ্রহণে প্রতিবছর বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০০৩ সালে ভেজাল খাদ্যগ্রহণজনিত কারণে মৃত্যুহার ছিল ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১০ সালে এই মৃত্যুহার এসে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ শতাংশে। সাধারণত শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা ভেজাল খাদ্যগ্রহণে বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৩ শতাংশ রোগাক্রান্ত শিশুর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে এক লাখ ২৫ হাজার। এছাড়া ভেজাল খাবার খেয়ে অপুষ্টির কারণে অসংখ্য শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এ কারণে অটিস্টিক শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জরিত। সাধারণত অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশায়। তারা দীর্ঘদিনের মজুত করে রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য অবাধে বিক্রি করে থাকে। অনেক ফুড কোম্পানি মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য নতুন মোড়ক দিয়ে আবার বাজারজাত করে। বিক্রেতারা ওজন বাড়ানোর জন্য খাদ্যদ্রব্যে কাঁকর, বালি, পানি ইত্যাদি ক্ষতিকর জিনিস মেশায় এবং ভালো দ্রব্যে নিম্নমানের দ্রব্য মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। ওজন বাড়ানোর জন্য মাংসের সঙ্গে পানি মেশানো বা হোটেলের বিরিয়ানিতে গরুর মাংসের বদলে কুকুরের মাংস পাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

অধিক সময় সংরক্ষণ ও আকর্ষণীয় করার জন্য খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। এর ফলে খাদ্যের গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। অধিকাংশ হোটেলে বাসি ও পচা খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে-সেখানে অননুমোদিত খাদ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে এবং কারখানাগুলোয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের সাধারণ চাষিও ইদানীং ফল পাকানোর জন্য মাত্রাতিরিক্তভাবে ফরমালিন ব্যবহার করছে। ফরমালিনযুক্ত ফল খেয়ে কিডনি ও চোখের ক্ষতি হচ্ছে এবং ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, যার মূল কারণ বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত খাদ্যগ্রহণ। শুধু খাদ্যদ্রব্যেই নয়, জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা যে ওষুধ সেবন করি, তাতেও ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে।

পণ্যের সঙ্গে সরকারি অনুমোদনযুক্ত সিল ও পণ্যের মেয়াদ এবং নির্ধারিত মূল্য লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মোড়কবিহীন খাদ্যপণ্যে ভেজাল চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে এসব পণ্যেরও ভেজাল এড়ানো সম্ভব। খাদ্যে ভেজাল একটি মারাত্মক সমস্যা। জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এটি রোধ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০