বিক্ষোভ দমনের বিশদ বিবরণ প্রকাশের আহ্বান ভলকার টুর্কের

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বাংলাদেশে দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকার জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্রের অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বাংলাদেশ সরকারের কাছে জরুরিভাবে গত সপ্তাহের বিক্ষোভ দমন ও ভয়াবহ সহিংসতা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রকাশ এবং সব আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রম যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মানদণ্ড মেনে চলে, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে (চাকরিতে কোটা বিষয়ে) সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র প্রতিবাদ ও যুব আন্দোলনে ২০৩ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি, যাদের অনেকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা গেছে, কমপক্ষে দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে। বিরোধীদলীয় নেতাসহ কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন, আমরা অবগত হয়েছি, সরকার সমর্থকদের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যাদের সুরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

‘জনগণের মনে যে গভীর আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যেসব কারণে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে, তা বন্ধে আলাপ-আলোচনার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারের প্রতি আমার আহ্বান, প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নীতিমালা ও মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।’ তিনি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে ইন্টারনেট চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিতে সাংবাদিক, মিডিয়া প্রতিষ্ঠানসহ জনসাধারণ অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে অবশ্যই নিহত, আহত ও আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাদের পরিবারের কল্যাণের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, নির্বিচার পদক্ষেপ, যেমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে দীর্ঘসময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। নাগরিকের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অন্যান্য অধিকার চর্চা, চলাচলের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাঅধিকার এবং অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, সে সম্পর্কে জনগণ জানতে পারছে না। এ কারণে তাদের কৃতকর্মের দায়মুক্তির আশঙ্কা বাড়ছে।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্যে তিনি আহ্বান জানান। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং যারা প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের প্রতি কোনো রকম প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা যেন নেয়া না হয়, তার নিশ্চয়তা দিতে তিনি সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ, জনগণের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার সুরক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপত্তা খাতের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০