জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভূমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু ইজারা দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উৎসে মূসক ইজারাদার প্রতিষ্ঠান (সরকারি প্রতিষ্ঠান) নাকি ইজারা নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবেÑ এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধান দেয়া হয়েছে। এনবিআর বলছে, ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে দলিল নিবন্ধনের সময় ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর পরিশোধ করতে হবে। নিবন্ধনের সময় সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ইজারাদার প্রতিষ্ঠান এই কর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে কি নাÑ তা নিশ্চিত হয়ে নিবন্ধন করবে। তবে ১০ বছরের অধিক সময়ের জন্য ইজারা দেয়া ভূমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে এই উৎসে কর কর্তন করতে হবে।
সূত্রমতে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দিয়ে থাকে। এছাড়া গণপূর্ত, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও বিভিন্ন সময় স্থাবর সম্পত্তি ইজারা দিয়ে থাকে। আবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের শর্তে জমি ইজারা দিয়ে থাকে। আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী এসব জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান নাকি ইজারা নেয়া ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান উৎসে কর পরিশোধ করবেÑ এই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সম্প্রতি এনবিআর এই বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে আদেশ জারি করেছে।
আদেশে বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে কোনো ইজারাদার কর্তৃক অন্যূন ১০ বছর মেয়াদে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভূমি, ফ্ল্যাট, প্লট বা অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি ইজারা প্রদান করা হয়। অথবা কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্পনগরীতে ভূমি উন্নয়নপূর্বক শিল্প স্থাপনের উপযোগী করে বিনিয়োগকারীর অনুকূলে ইজারা প্রদান করা হয়, সে সব ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর অধীন সংশ্লিষ্ট ভূমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ সব ধরনের স্থাবর সম্পত্তির ইজারা দলিল নিবন্ধনের সময় রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১২৮ এর বিধান অনুযায়ী ইজারাদার হতে ইজারা মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করে তা সরকারি কোষাগারে জমাদান নিশ্চিত করবে। তবে দুটি ক্ষেত্রে এই কর কর্তন করতে হবে না। তা হলোÑ স্থাবর সম্পত্তির ইজারার মেয়াদ ১০ বছরের কম হলে এবং হস্তান্তরকারী ইজারাদার না হলে।
আদেশে বলা হয়েছে, উৎসে কর কর্তনের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় বিবেচ্য হবে। যার মধ্যে রয়েছেÑ১০ বছর বা তদূর্ধ্ব মেয়াদের জন্য ইজারাকৃত স্থাবর সম্পত্তির ইজারা দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১২৮ এর অধীন উৎসে কর সংগ্রহ প্রযোজ্য হবে। ইজারা দলিল নিবন্ধনকালে ইজারাদার উৎসে কর পরিশোধ করবেন। ইজারা দলিল নিবন্ধনকালে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১২৫, ধারা ১২৬ বা অন্য কোনো ধারার অধীন কর পরিশোধের প্রযোজ্যতা নেই। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন বা পিএসআর উপস্থাপনের ব্যর্থতায় উৎসে কর সংগ্রহের হার অপেক্ষা ৫০ শতাংশ অধিক হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, মফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি উত্তরা ১৮নং সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ‘সি’ ব্লকের ১৬৫৪ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। রাজউক ৯৯ বছরের জন্য রহমানকে এই ফ্ল্যাট ইজারা দিয়েছে। রহমান ইজারা মূল্য হিসেবে ৪০ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের ইজারা দলিল নিবন্ধন করতে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১২৮ এর বিধান অনুযায়ী, রাজউক হতে ইজারা মূল্যের ৪ শতাংশ হারে ৪০ লাখ টাকায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা উৎসে কর সংগ্রহ এবং তা সরকারি কোষাগারে জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সাবরেজিস্ট্রার ইজারা দলিল নিবন্ধন করবেন।
অপর উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫৫ একর জমি শিল্প স্থাপনের উপযোগী করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এবিডি লিমিটেডকে ৫০ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করেছে। বেজা এবং এবিডি লিমিটেড কর্তৃক সম্পাদিত ল্যান্ড লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এলএলএ) অনুযায়ী, এই জমির ইজারা মূল্য ১০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রার ইজারা দলিল নিবন্ধনের আগে বেজা হতে ইজারা মূল্যের ৪ শতাংশ হারে ৪ কোটি টাকা উৎসে কর সংগ্রহ ও তা সরকারি কোষাগারে জমাদান নিশ্চিত করবেন।