নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত সংস্থাটি। একই সঙ্গে দেশ থেকে কারা কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন, সব তথ্য অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জানা যাবে। এদিকে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার অর্থনীতি-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। গণ-আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর গতকাল মঙ্গলবার অফিস খোলার প্রথম দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিন কার্যালয়ে আসেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আলোচনা সভায় ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. খুরশীদ আলম, নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। ইআরএফের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ অন্যান্য সদস্য।
সভায় ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে লুটপাট চলেছে। তাতে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে গেলেও কোনোরকম সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ সময় সঠিক পদক্ষেপ নেয়া।’ এ প্রসঙ্গে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ‘দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর তাদের বিষয়ে আপনারা আরও জানতে পারবেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে যে ‘বিধিনিষেধ’ ছিল, তা তুলে দেয়ার কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তাতে এক রকম ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তাই আজ থেকে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের মতোই প্রবেশ করতে পারবেন। সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে আগের মতোই আদানপ্রদান করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের রিপোর্টের মাধ্যমেই ব্যাংক খাতে ঘটে যাওয়া নানা রকম অপরাধ অন্যায়ের বিষয়ে জানতে পারতাম। এরপর আমরা সেগুলোর ওপর নানা ব্যবস্থা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতাম। তবে আমার অনুরোধ সত্য ও সঠিক সংবাদের। আমরাও চাই আপনারা ব্যাংক খাতে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিষয়ে প্রতিবেদন করেন।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেছেন, এমন খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে গভর্নর মানসিক চাপের কারণে আজ (গতকাল) অফিস করছেন না; তিনি যার যার কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য বলেছেন।’
সভায় ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কাজ করতে গিয়ে নানা রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় অনেক গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যায় না, কিংবা নিতে দেয়া হয় না। তাতে নানা রকমের চাপের মুখোমুখি হতে হয়।’ ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ‘পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে আরও অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আসে। এখানেও পরিবর্তন আসবে। খেলাপি ঋণ নিয়ে নানা রকমের আইন রয়েছে। তবে নানা চাপের কারণে এটা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। তবে সামনে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমি মনে করি।’