নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজেদের সংখ্যালঘু ধারণার ‘খোপে’ আবদ্ধ না করতে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি হিন্দুদের ধৈর্য ধরে সরকারকে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘খোপ তৈরি হলে, খোপের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি লেগে যাবে। একাত্ম হয়ে আইনের অধিকারের দাবি তুলতে হবে।’ গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দির।
৫ আগস্ট হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের ২৯ জেলায় হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা চেয়ে শাহবাগসহ বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন শুরু করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেটা বললেন, ‘আমরা আইনের অধিকার পাই না; বিচারব্যবস্থা আমাদের দিকে তাকায় না, পুলিশ আমাদের দিকে তাকায় না; কিছুই আমাদের দিকে তাকায় নাÑকারণ আমি অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই। আমাদের নীতিটা আমরা প্রতিষ্ঠা করেতে পারি নাই। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করেছি, এটা বায়াসড একটা প্রতিষ্ঠান।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যত কিছুই বলেন, একটা খোপ করতে আরম্ভ করবেন, তারা মজা পেয়ে যাবে। ওই মজার খেলাতে আমাদের আর নিয়ে যাইয়েন না। আমরা এসেছিÑএক মানুষ, এক অধিকার। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। করতে পারলাম কি পারলাম না, সেটা পরে বিচার করেন, যদি না পারি আমাদের দোষ দিয়েন।’ বাংলাদেশকে ‘একটি পরিবার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবারের মধ্যে কোনো প্রার্থক্য তৈরি করা বা বিভেদ করার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এটা নিয়ে আর কোনো বিভেদ যেন না হয়। আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাক্সক্ষা, সেখানে আমরা বিবেচিত মুসলমান হিসেবে নয়, হিন্দু হিসেবে নয়, বৌদ্ধ হিসেবে নয়Ñমানুষ হিসেবে। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক।’ মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্ন রাখেন, ন্যায়বিচার হলে কি বিচার পাবে না? কার সাধ্য আছে সেখানে বিভেদ তৈরি করার?
তিনি বলেন, ‘এ সম্প্রদায় হলে ওই আদালতে, এ সম্প্রদায় হলে ওই আদালতে যাব? আইন একটা, এমনটা হতে পারে না।’ নিজেদের সংখ্যালঘু হিসেবে না দেখে গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন ইউনূস।তিনি বলেন, ‘এটাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। আপনারা যদি টেনে টেনে নিয়ে আসেন, আমি অমুক, আমি তমুকÑএটা আবার পুরোনা খেলায় চলে গেলেন। এটা আপনাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা এগুলো শিকার করবে। আপনারা বলেন, ‘আমরা মানুষ, আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমার সাংবিধানিক অধিকার এই আমাকে দিতে হবে’Ñসব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন আপনারা, আর কিচ্ছু চাইয়েন না।’
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনি শুনবেন না আমরা (কখনও) হিন্দুপাড়া বলে বাদ দিয়ে গেছি; মুসলমানপাড়ায় চলে গেছি। একসঙ্গে গেছি, একভাবে গেছি।’