বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতা তৈরির মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন লোপাট। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে একটি অলিগার্ক গোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপ রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির মাধ্যমে রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা ঘরে তুলেছে। আবার এ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ার ক্ষেত্রে এ ক্যাপাসিটি চার্জ অনেকখানি দায়ী। কাজেই এ ক্যাপাসিটি চার্জের অন্ধকূপ বন্ধ হওয়া জরুরি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে লুট ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০০৮-০৯ থেকে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ বছরে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, যার একটি অংশ সরাসরি ডলারে দেয়া হয়েছে। বাকিটা ডলারে না দিলে এর বিনিময় হার ধরে দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা হয়েছে। আর এ ক্যাপাসিটি চার্জের বড় অংশই বৈধ বা অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে গেছে।
এ কথা সত্যি যে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভয়াবহ সংকট বিরাজ করছিল। সে সময় দ্রুততম সময়ে দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার-বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেই। বেসরকারি খাত যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় সে জন্য তাদের জন্য স্বল্পসুদে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়। মূলত ব্যাংকের অর্থের ওপর ভর করেই বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গড়ে তোলেন। এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ ছিল নামমাত্র। আর এসব ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মালিকদের সুবিধা দিতে সরকার প্রণয়ন করে জরুরিভিত্তিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন। এ আইনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। ফলে এক্ষেত্রে বড় অনিয়ম ও দুর্নীতি হলেও প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল না।
এ আইনের সুযোগ নিয়ে মূলত অনেক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০০৯-১০ সময়ে দেশে জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে সে প্রয়োজন নেই বললেই চলে। তাছাড়া আইনটিতে উল্লেখ ছিল, ধীরে ধীরে সরকার ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো তদবির এবং মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত কমিশনখোর কর্মচারীদের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বারবার এসব কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় ওই বিশেষ আইনটি বিলুপ্ত করার সময় এসেছে। আর ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকেও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে হবে। এতে বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থের সাশ্রয় হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে মনোযোগী হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।