বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) উদ্যোগটি ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের পথে থাকা লজিস্টিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা। সীমান্ত পেরিয়ে পণ্য ও সেবার আদান-প্রদান সহজতর করার মাধ্যমে এ উদ্যোগটি পরিবহন খরচ এবং যাতায়াতের সময় কমাতে পারে। এটা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ভুটান এবং নেপালের মতো স্থলবেষ্টিত দেশের জন্য, যারা বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছানোর জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। এ চুক্তি উন্নত সংযোগ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক পর্যটন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে, যা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
২০২১ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আঞ্চলিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় আয় ৭.৬ শতাংশ পর্যন্ত এবং বাংলাদেশের আয় শতাংশ এরও বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পৃথিবীর প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষের জন্য ব্যাপক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপাল ২০১৫ সালের এ চুক্তিটি অনুমোদন করেছে, কিন্তু ভুটান পরিবেশগত উদ্বেগ এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এখনও অনুমোদন করেনি। তবে ভুটান সাম্প্রতিক মিটিংগুলোয় পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা হয়তো আবারও এ উদ্যোগে যোগদানের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে।
বিবিআইএন উদ্যোগের প্রধান অংশ হলো বিবিআইএন মোটর যানবাহন চুক্তি (এমভিএ), যা ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত পেরিয়ে যানবাহনের চলাচল সহজ করা এবং বাণিজ্যের পথে থাকা বড় বড় বাধা, যেমন জটিল সীমান্ত পরীক্ষা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাস্টমস প্রক্রিয়া দূর করা, যা অতীতে বাণিজ্য দক্ষতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ প্রক্রিয়াগুলো সহজতর করার মাধ্যমে, বিবিআইএন চুক্তি বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করতে, বাণিজ্য বৈচিত্র্য আনতে, খরচ কমাতে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
৭৬টি চুক্তিবদ্ধ দেশ, চীন, ভারত এবং পাকিস্তানসহ, টিআইআর কনভেনশন একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি সরবরাহ করে; যা দেশের রাজস্ব সুরক্ষিত রেখে সীমান্ত পেরিয়ে বাণিজ্য করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ বিবিআইএন, এমভিএ, বিসিআইএম করিডোর এবং বিমসটেকের মতো উদ্যোগগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য কাজ করে থাকে। টিআইআর সিস্টেমটি আঞ্চলিক সংহতি শক্তিশালী করবে এবং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়াবে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) উপ-অঞ্চল এখনও তাদের ভৌগোলিক কাছাকাছি অবস্থানের পুরো সুবিধা নিতে পারেনি; যার ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য খুবই সীমিত। ভারতের মোট বাণিজ্যের মাত্র ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ১০ শতাংশেরও কম এ অঞ্চলে হয়। এর বিপরীতে, পূর্ব আফ্রিকা এবং সাব-সাহারান অঞ্চলে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের যথাক্রমে ৫০ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ, সিআটিএস ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে।
বিবিআইএন উপ-অঞ্চলটি খারাপ অবকাঠামো এবং লজিস্টিকসের কারণে উচ্চ বাণিজ্য ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জিডিপি এবং বাণিজ্যের ওপর সিইউপিএসের একটি বিশ্লেষণ দেখিয়েছে, এই দুইয়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১০ সালে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার এবং জিডিপি ছিল ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং জিডিপি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা ইইওঘ কে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলের মধ্যে একটি হিসেবে প্রমাণ করে।
বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানের কারণে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট হয়ে উঠতে পারে এবং একই সঙ্গে ভুটান ও নেপালের জন্য উন্নত পোর্ট সুবিধা প্রদান করতে পারে। যদি এই অঞ্চলে সংহতি ঘটে, তাহলে সিইউটিএস ইন্টারন্যাশনালের পূর্বানুমান অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের সম্মিলিত জিডিপি ৮.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সাসেক (ঝঅঝঊঈ) প্রোগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য পরিবহন, জ্বালানি, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক করিডোর এবং আইসিটি খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।
অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে বিবিআইএন এবং এমভিএ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সব দেশের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালকে টিআইআর কনভেনশনে যোগ দেয়াও উচিত; যাতে ভূমিবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের জন্য পোর্ট সুবিধা উন্নত হয় এবং সীমান্ত পারাপারের যানবাহন চলাচল সহজ হয়।