নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এছাড়া সাবেক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর (শাওন) অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তার ভিত্তিতেই কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার কোটি টাকা লোপাট, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বন কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার ‘সুফল প্রকল্পে’ ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে ঠিকাদারকে কাজ দেয়া, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমি বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) তৎকালীন চেয়ারম্যানকে জলবায়ু ট্রাস্টে দিতে বাধ্য করা, পরিবেশ দূষণকারী কলকারখানায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা (ইটিপি) পরিদর্শন না করেই সনদ দেয়া এবং বিভিন্ন খাতে ভুয়া খরচ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০২১-২২ অর্থবছরে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের গম ও চাল আত্মসাৎ এবং দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লিখিত তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। তবে এখনো অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগসহ অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়নি।
এদিকে ২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জানা যায়, এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন নির্বাচন। নির্বাচনী হলফনামায় লেখেন ১৫ শতক কৃষি জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার।
অভিযোগ রয়েছে, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান পলক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান পলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি হত্যা মামলায় গত ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার হন পলক।
অন্যদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে আছেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গত ২২ আগস্ট তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রা (প্রায় ১০ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।