জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে বেশ কিছুদিন সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে কোনো কনটেইনার আসতে পারেনি। এতে আমদানি করা পণ্যের অনেক কনটেইনার আইসিডিতে আনা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত আইসিডিগামী ১ হাজার ৮৫৬ কনটেইনার আটকা পড়ে। এসব কনটেইনার সময়মতো আইসিডিতে না আসায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আমদানিকারকরা।
তবে আমদানিকারকদের অনুরোধ আর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়ার ফলে জটিলতা নিরসন হচ্ছে। আইসিডিগামী এসব কনটেইনার আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর ও পানগাঁও আইসিটি থেকে খালাস নিতে পারবে। এনবিআর থেকে এ ধরনের অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ফলে রেলযোগে ঢাকা আইসিডি ঘোষিত আমদানি কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডি কমলাপুর, ঢাকায় আনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার অবতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ সচল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর প্রান্তে ঢাকা আইসিডিগামী বিপুল পরিমাণ কনটেইনার জমে যায়। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ঢাকা আইসিডি ঘোষিত আমদানি কন্টেইনারগুলো পণ্য বা কার্গো ঘোষণা সংশোধনের মাধ্যমে ঢাকা আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর বা পানগাঁও, আইসিটি থেকে ডেলিভারি প্রদানের অনুমতির জন্য অনুরোধ জানিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়। এই চিঠি অনুযায়ী ২২ আগস্ট এ বিষয়ে অনুমতি দিয়ে বন্দর ও কাস্টমকে চিঠি দেয় এনবিআর। যাতে বলা হয়, এনবিআর অনতিবিলম্বে উদ্ভূত পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২২ আগস্ট আমদানিকারকের অভিপ্রায় অনুযায়ী এই সময়ে আমদানি করা মোট ১ হাজার ৮৫৬টি কনটেইনার চট্টগ্রাম, আইসিডি কমলাপুর, আইসিডি পানগাঁওয়ের যেকোনো একটি বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি প্রদান করে। ফলে আশা করা যায়, চলমান কনটেনার জট শিগগির অনেকটা নিরসন হবে এবং পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং এ থেকে উত্তরণে এরূপ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ উৎপাদনমুখী শিল্প থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে সাপ্লাই চেইনকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখা তথা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এনবিআর প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতেও যেকোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে নীতি সহায়তা প্রদানে এবং দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগানে অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রাখতে এনবিআর একইভাবে সচেষ্ট থাকবে।
এনবিআর সূত্র মতে, ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে চাকা আইসিডিগামী কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরবর্তী তিন মাস ঢাকা আইসিডির পরিবর্তে কনটেইনারগুলো নৌরুটে পানগাঁও প্রেরণ অথবা আইজিএম সংশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়ার গেজেট প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনার জাহাজ যোগে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর তা রেলযোগে কমলাপুর আইসিডিতে পাঠানো হয়। দেশের বিরাজমান বিশেষ পরিস্থিতিতে ২০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়াগন সরবরাহ বন্ধ রাখে।
এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ও কনটেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৮৭৮ টিইইউএসের স্থলে ২ হাজার ৭৮ টিইইউএস ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনার জমে যায়। এছাড়া আরও আনুমানিক ৬০০ টিইইউএস ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে আমদানিকার করা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের আমদানি কনটেইনার গ্রহণ করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ এই ধরনের পরিস্থিতির কারণে এনবিআর কাস্টমস আইনের সেকশন ৯ ও ১০ সংশোধনের মাধ্যমে আমদানিকরকরা অথবা তাদের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সংশ্লিষ্ট শিপিং লাইনকে আমদানি করা কনটেইনারের তালিকা প্রদান করে কমলাপুর আইসিডির পরিবর্তে নদীপথে জাহাজযোগে পানগাঁও বন্দরে আনার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ঢাকা আইসিডি এবং পানগাঁও আইসিটিতে কনটেইনার পরিবহন সহজতর হয় এবং আমদানি-রপ্তানিকারকরা উপকৃত হন।
বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আগামী তিন মাস পর্যন্ত আইসিডিগামী কনটেইনার পানগাঁও প্রেরণ বা আইজিএম সংশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডিগামী কনটেইনারের পরিমাণ স্থিতিশীল থাকবে এবং যথাসময়ে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল হবে। ফলে ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনারের সাপ্লাই-চেইন নিরঃবচ্ছিন্ন ও গতিশীল রাখার স্বার্থে বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেইনারগুলো আগের মতো জরুরি ভিত্তিতে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে নৌরুটে পানগাঁও প্রেরণ অথবা আইজিএম সংশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি নেয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠির সঙ্গে তিন মাসে আইসিডিগামী কনটেইনারের তালিকা দেয়া হয়।
অন্যদিকে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বন্দরের চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ১৮ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী এনবিআর থেকে অনুমতি দিয়ে ২৬ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।