ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমতে পারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতের প্রবৃদ্ধির হার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কমবে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। মূলত এ সময় ভারতের জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় সরকারি ব্যয় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গেছে। খবর: আনন্দবাজার ও এনডিটিভি।

গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৪) ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল সাত দশমিক ৮ শতাংশ। নির্বাচনের আগে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির পালেও হাওয়া লেগেছিল। কিন্তু ৫২ অর্থনীতিবিদের ওপর পরিচালিত রয়টার্সের জরিপে জানা গেছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছয় দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এক বছরের মধ্যে কোনো প্রান্তিকে এবারই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে।

গত অর্থবছরের চারটি প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার সাত শতাংশের বেশি ছিল। গত বছরের এপ্রিল-জুন থেকে শুরু করে প্রথম তিনটি প্রান্তিকে তা ছিল আট শতাংশের ওপরে। ফলে গত অর্থবছরে বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশ ছিল ভারত। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, চলতি বছর হয়ে যাওয়া
নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে মোদি সরকার বিপুল পরিমাণে মূলধনি ব্যয় করেছে।
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে রয়টার্সের সমীক্ষায় আরও জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি প্রায় এক শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেলেও ভারত হয়তো বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশের তকমা ধরে রাখবে। কিন্তু নির্বাচনের পর সরকারি ব্যয় কমেছে। সে কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। আশঙ্কা আছে, প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যেতে পারে।

চলতি আগস্টের ১৯ থেকে ২৬ তারিখে ৫২ অর্থনীতিবিদকে নিয়ে সমীক্ষা করেছে রয়টার্স। তাদের বেশিরভাগের মত, এপ্রিল-জুনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক ৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে একাংশের আশঙ্কা, প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশে নেমে আসতে পারে। কেউ কেউ আবার ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছেন। আবার স্টেট ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরে ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে তারা বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাত শতাংশ।

এর আগে গত এপ্রিলে আইএমএফ বলেছিল, চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী পর্যায়ে, বিশেষত ভারতের গ্রামাঞ্চলের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে জিডিপির সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে আইএমএফের প্রতিবেদন।
এদিকে প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগাতে চলতি অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মোদি সরকার। ভারতে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন কমে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ। তাই বাজেটে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়া হয়েছে। এক নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এক হাজার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে (আইটিআই) উন্নত করার কথা বাজেটে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বাড়লে প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের সরকারি পরিসংখ্যান এখনও প্রকাশিত হয়নি। আগামী শুক্রবার তা প্রকাশিত হবে; সবাই এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

এর আগে এপ্রিলে রয়টার্সের এক জরিপে দেখা যায়, ভারত সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব। দেশটির মোট ২৬ জন অর্থনীতিবিদ রয়টার্সের জরিপে অংশ নেন। এদের অধিকাংশ বা ১৫ জনই মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে বেকারত্ব সমস্যাই হবে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আট অর্থনীতিবিদ মনে করেন, গ্রামীণ ভোগ চাহিদাকে চাঙ্গা করাই হবে সবচেয়ে বড় সমস্যা, আর অন্য দুজন বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যের কথা। সে সময় তারা জানান, চলতি অর্থবছর শেষে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ছয় শতাংশের মতো হবে বলেও তারা আশাবাদী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০