সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: নিয়ম অনুসারে ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করার কথা। কিন্তু আমদানিকারকের সদিচ্ছার অভাবে এসব আমদানিকৃত কনটেইনার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত সময়ে বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে থাকে। গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে ১০ হাজার ১৪২টি কনটেইনার পড়েছিল। এসব কনটেইনার থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বন্দরসহ অংশীজনের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। আর বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী, খাদ্যশস্য, শিল্পের কাঁচামাল আমদানির আড়ালে দেশে থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার মাধ্যমে হিসাবে ব্যবহƒত হওয়ার একটি পথ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত কনটেইনার কিছু বন্দর ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোয় পড়ে থাকে। এ ধরনের কনটেইনার বর্তমানে বন্দরের পড়ে আছে ১০ হাজার ১৪২টি। যা গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে ৭ হাজার ৭০৮ টিইইউএস। আর পহেলা এপ্রিল ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের অকশন ইয়ার্ডে নিলামেযোগ্য কনটেইনার ছিল পাঁচ হাজার ৪৪১টি। আর ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ছিল চার হাজার ৬০টি কনটেইনার। অর্থাৎ গত আট বছরের ছয় হাজার ৮২ কনটেইনার। আর বিভিন্ন সময়ে আমদানিকৃত কনটেইনার ভর্তি পণ্য খালাস না নেয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে নিলামযোগ্য কনটেইনারের স্তূপ। এসব কনটেইনারের মধ্যে রেফার কনটেইনার, ড্রাই কনটেইনার আছে। এতে নিলামযোগ্য ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য রয়েছে। এছাড়া ৪১৯টি গাড়ি আছে।
সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চার দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার গুদামভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কনটেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের। একইভাবে ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যেমন- চার দিন পর থেকে পরবর্তী ৭ দিন ৪০ ফুট কনটেইনারে ১২ ডলার, এরপর ২১ দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার, ২১ দিন পর থেকে ৪৮ ডলার গুদাম ভাড়া গুনতে হয়।
অপরদিকে অনিয়মিতভাবে নিলামযোগ্য কনটেইনার ও গাড়ি নিলাম করছে চট্টগ্রাম কাস্টম। এর মধ্যে রয়েছে নষ্ট গাড়ি, কাপড়, পেঁয়াজ, আদা, আপেল, ড্রাগন ফল, কমলা, আঙুর, হিমায়িত মাছ, মহিষের মাংস, মাছের খাদ্য, লবণ, রসুন, সানফ্লাওয়ার অয়েল, কফি ইত্যাদি।
কনটেইনার ছাড় নেয়ার বিষয়ে একাধিক আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বলেন, বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী, খাদ্যশস্য, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। কিন্তু কিছু আমদানিকারক নির্দিষ্ট সময়ে নানা কারণে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস নিতে পারে না। এর মধ্যে সঠিক সময় পণ্য খালাসের কাগজ সাবমিট না করা, আমদানি মূল্য চেয়ে সেল ভ্যালু কম হলে কিংবা আইনি জটিলতা থাকলে। আবার অর্থ পাচারের বিষয় থাকলে তখন আমদানিকারকের পণ্য খালাসে অনাগ্রহ থাকে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ড আরও সতর্ক থাকতে হবে। আবার কনটেইনার খালাস না নেয়ার কারণে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। বন্দরও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
আমদানির পর সাধারণত আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চালানের যাবতীয় নথি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তী সময় আমদানিকারককে পণ্য খালাসের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় কাস্টমস। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসের ব্যাপারে আমদানিকারক সাড়া না দিলে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস তা নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা ৮২ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে অখালাসযোগ্য পণ্য নিলামে বিক্রি কিংবা নষ্ট করার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। তা না হওয়ায় বছরের পর ১০ হাজার কনটেইনার কীভাবে পড়ে থাকে? কার স্বার্থ রক্ষায় চট্টগ্রাম কাস্টমস ভূমিকা পালন করছে! নাকি নিলাম প্রক্রিয়ায় উদাসীনতা আছে। এক্ষেত্রে দুদক তদন্ত করতে পারে। দ্রুত নিলামযোগ্য পণ্য নিলাম করলে সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে নিলামযোগ্য কনটেইনারে সংখ্যা বেড়েছে। এ নিলামযোগ্য কনটেইনারের কারণে আমাদের অপারেশন কার্যক্রম বিঘ্ন হয়, অন্যদিকে আমরা গুদামভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তবে নিলামে বিক্রি হলে আমরা কিছু পেমেন্ট পায়। অপরদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের ব্যবহƒত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগটি বিজি পাওয়া যায়। ফলে উনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে একই সংস্থার ডেপুটি কমিশনার (নিলাম) সেলিম রেজার ব্যবহƒত ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।