নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রোগীর মৃত্যুর জের ধরে চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেবা কার্যক্রম চালুর চেষ্টা করেন। তবে বিকাল সাড়ে ৪টায়ও চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে দৈনিক ১ হাজার ৮০০ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালের ১৪টি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৮ শতাধিক রোগী। চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে হাসা হাজারো রোগী ফিরে যান। বিপাকে পড়েন ভর্তি থাকা রোগীরা। চিকিৎসকরা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আবদুল আজিজ নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে কয়েকজন যুবক কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজীকে মারধর করেন। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক চিকিৎসক সজীবকে মারধর করছেন। একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যান। ফুটেজে হামলাকারী দুজনকে ইতোমধ্যে শনাক্তও করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের ওই দুজন নিহত ব্যক্তির (আজিজ) স্বজন নয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সকাল ৭টা থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয়ার পরই আবদুল আজিজের মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদুল মোস্তফা বলেন, জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেয়ার পরও কয়েকজন যুবক চিকিৎসককে মারধর করে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালান। ভাঙচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। লুট হয় চিকিৎসা সরঞ্জামও। আহত চিকিৎসককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের সেবা দিচ্ছেন না। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধও করে দেন। সকাল ৮টা থেকে জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও ওয়ার্ডের কর্মীরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার নুরুল হুদা বলেন, যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে কোনো কর্মীই কাজে ফিরবেন না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। আগে নিরাপত্তা, তারপর সেবা।
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, ‘তিন মাস বেতন পাচ্ছি না। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের ওপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে কীভাবে কাজ করব আমরা।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (প্রশাসন) জিহাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সমাধানে চিকিৎসক, নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বেলা ২টায় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান।