নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পতনের পরও উত্তপ্ত ছিল সবজি বাজার। এত দিনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সেখানে। কিন্তু বাজারে চাল, মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম এখনও বাড়তি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি অন্তত ১০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের দামও হালি প্রতি বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা।
গতকাল শুক্রবার পুরান ঢাকার শ্যামবাজার, কাপ্তানবাজার, রায়সাহেব বাজারসংলগ্ন বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবজি ছাড়া কমবেশি সবকিছুর দাম বাড়তি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা। ডিমের হালিতে খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে ৪ টাকা পর্যন্ত। পত্রপত্রিকায় মাছের দাম কমার সংবাদ এলেও বাজারে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, বোয়াল, ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। ফলে দারুণ বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ।
ক্রেতারা বলছেন, নতুন সরকার সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কমাতে যেমন উদ্যোগ নিচ্ছে, তেমনি মাছ মাংস ও চালের ক্ষেত্রেও সেই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাহলে নিম্নআয়ের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। রায়সাহেব বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা বলেন, সরকার পতনের পর কিছু পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও এখন আবার ধীরে ধীরে মাছ-মুরগি-ডিম সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রধান যে চাওয়া তার প্রথম কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ।
কাপ্তান বাজার থেকে পাইকারি মুরগি ক্রেতা আজমল হোসেন বলেন, একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। আর সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন সাপ্লাই কম। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার ১৭০ টাকার নিচে ব্রয়লার মুরগি নেই। পাইকারি যদি আমাদের ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা কেনা পড়ে তাহলে ভাড়া খরচ সব মিলিয়ে খুচরা ১৮০ টাকা বিক্রি করতে হবে।
নয়তো পোষাবে না। সোনালি মুরগির বিষয়ে এই ক্রেতা বলেন, দু-তিন আগেও সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। গত সপ্তাহে তা আরও ১০ থেকে ১৫ টাকা কম ছিল। কিন্তু এখন দাম বেড়ে গেছে। খুচরা পর্যায়ে ডিমের হালিপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারিতে বেড়েছে ডজন প্রতি ৫ টাকা।
ডিম ও মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামারের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। তাছাড়া ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি করা হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। ফলে সরবরাহ কম থাকায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে।
মুরগির দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগেও গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। দাম বেশি থাকার কারণে মাংস বিক্রি খুব কম হচ্ছে দেখে অনেক ব্যবসায়ী দাম কিছুটা কমিয়েছেন।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি দাম। এক কেজির কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। কমবেশি ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ বা জাটকার কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
এদিকে সবজির বাজারে এসে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। সরকার পতনের পর থেকে বেশির ভাগ সবজির দাম নাগালে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বাজারে পটোল থেকে শুরু করে বেগুন, চিচিঙ্গা, লাউ, কাঁকরোল, করলা, বরবটি, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। বলা চলে এক মাসের ব্যবধানে অনেক সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।