সুইজারল্যান্ডে আদানির ৩১ কোটি ডলার বাজেয়াপ্ত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানির ৩১ কোটি ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সুইজারল্যান্ডে। তবে সুইস ব্যাংকে থাকা নিজেদের ৩১ কোটি ডলার জব্দ হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে ভারতের আদানি শিল্প গোষ্ঠী। তাদের দাবি, সুইজারল্যান্ডে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়া চলছে না। খবর: দ্য উইক ও রয়টার্স।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বলেছে, সুইস ব্যাংকে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর ছয়টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর মানি লন্ডারিং–সংক্রান্ত এক তদন্তের অংশ হিসেবে এগুলো জব্দ করা হয়।
এক্স হ্যান্ডলে দেয়া ওই পোস্টে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আরও বলেছে, ২০২১ সালের প্রথম দিকে তদন্তটি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় ফৌজদারি আদালতের (এফসিসি) এক আদেশ থেকে জানা গেছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিনিয়োগকারীরা প্রথম অভিযোগ তোলার অনেক আগে জেনেভার সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তটি চালিয়েছিল। পরে ওই তদন্ত সুইজারল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এই অ্যাকাউন্ট গুলো ছিল এক তাইওয়ানিজ ব্যক্তির যাকে আদানির লোক বলে ধারণা করা হচ্ছে। হিন্ডেনবার্গ দাবি করছে নিজের লোক দিয়ে আদানি গ্রুপ কীভাবে অস্বচ্ছ বিদেশি তহবিলে বিনিয়োগ করেছিলেন তা আদালতের প্রামাণিত হয়েছে। তবে হিন্ডেনবার্গের ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী। গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন শিল্পগোষ্ঠীটি বলছে, অভিযোগটি স্পষ্টতই অসংগত, অযৌক্তিক ও অর্থহীন। কোনো কর্তৃপক্ষই তাদের কোম্পানির কোনো অ্যাকাউন্ট জব্দ করেনি বলে দাবি তাদের। আদানি গোষ্ঠী আরও বলেছে, সুইজারল্যান্ডের আদালত তাদের শিল্পগোষ্ঠীর আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নাম উল্লেখ করেনি। কোনো কর্তৃপক্ষ কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকেও এসব অভিযোগের ব্যাপারে আদানি গোষ্ঠীর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি বলেও দাবি তাদের।
আদানি গোষ্ঠী বলছে, বিদেশে তাদের কার্যক্রমগুলো স্বচ্ছ, সম্পূর্ণ প্রকাশিত এবং সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ প্রথম অভিযোগটি তুলেছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। তখন আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারকে নিজেদের অনুকূলে রাখার প্রচেষ্টা চালানো এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তখনো সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল আদানি গোষ্ঠী।
অভিযোগ রয়েছে, গৌতম আদানির শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক ব্যক্তি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, মরিশাস এবং বারমুডার আর্থিক সংস্থায় পুঁজি ঢেলেছিলেন। সেই সংস্থাগুলো প্রায় পুরো অর্থই লগ্নি করেছিল আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোয়। সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এর আগে আদানিকে নিয়ে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে এক ধাক্কায় আদানি গোষ্ঠীর সব শেয়ারেই ধস নেমেছিল। এরই সঙ্গে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারেও ধাক্কা লেগেছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি এন্টারপ্রাইজের পরিকল্পিত শেয়ার বিক্রির আগে তাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করার ফলে গ্রুপের শেয়ারের মূল্য ৮৬ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। একই সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান থেকে ৩৬ নম্বরে নেমে আসেন গৌতম আদানি।
এদিকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তরফ থেকে নতুন করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দাবি করা হয়েছিল, আদানিদের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলেন সেবি প্রধান এবং তার স্বামী। এই অভিযোগ সামনে আসতেই প্রাথমিক ভাবে তা খারিজ করে দিয়েছিলেন মাধবী পুরী বুচ এবং তার স্বামী ধবল বুচ।

প্রসঙ্গত, এর আগে আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশের পরই তুলকালাম কাণ্ড হয়েছিল ভারতের বাণিজ্য মহলে। সেই সময় হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, বিদেশে বেনামি সংস্থা খুলে নিজেদের শেয়ার নিজেরাই কিনে নিত আদানি গোষ্ঠী। এভাবে বাজারে ভুয়া চাহিদা সৃষ্টি করে শেয়ারের দাম চড়ানো হত। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে এসেছে আদানি গোষ্ঠী। বরং তাদের অভিযোগ ছিল, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার ‘মিথ্যা’ রিপোর্টের মাধ্যমে কোম্পানিকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০