ফের বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিন

আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর অবদান অনেক। প্রতি বছরই কখনও নদীর ভাঙনে, কখনও দুকূল চাপিয়ে বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়। বন্যা ও নদী ভাঙনের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সত্ত্বেও নদী ভাঙছে, বন্যা হচ্ছে। নদীভাঙন থেকে রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো পূর্বাভাস আমলে নিলে নদী এত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারত না।

নদীর এক পাড় ভাঙবে, আরেক পাড় গড়বে, এটিই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃতির নিয়মে বন্যা হয় না। এটি মানবসৃষ্ট। মানবসৃষ্ট বন্যা মোকাবিলায় মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রতিক দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ‘ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, গরম কমলেও বন্যার শঙ্কা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘এত বৃষ্টি দেখেনি কক্সবাজার, পাহাড়ধস ৬ প্রাণহানি’ শীর্ষক প্রতিবেদন।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত যে পূর্বাভাস দিয়ে চলেছে, তাতে প্রতীয়মান হয়, বন্যার আরেকটি ঢল উজান থেকে আসতে পারে। এতে কয়েক জেলা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। ফলে আরও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হতে চলেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে বেশির ভাগ পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপৎসীমার ওপরে বয়ে যাচ্ছে কয়েকটি পয়েন্টে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আবারও বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্যায় ক্ষতি ও প্রাণহানির ক্ষত না শুকাতেই বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।

প্রতি বছর বন্যা হওয়ায় আমাদের অভিজ্ঞতা কম নয়। দুর্গতদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ তাদের সহায়সম্বল ও গবাদি পশুর রক্ষা করতে হবে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির নিশ্চিত করতে হবে। ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশু হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দুর্গতদের এগিয়ে চলেছে। সামাজিক সংগঠন, এনজিও থেকে শুরু করে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।

বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকালে ত্রাণ মিললেও বন্যা-পরবর্তী সময়ে তাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এ কাজটি সরকার তথা প্রশাসনের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বন্যাকবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব বেশি। দলীয় লোক হিসেবে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কাজেই সবার আগে বন্যার্তদের পাশে তাদের দাঁড়ানোর মানসিকতা থাকতে হবে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই যেন ত্রাণ-সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিজ আবাসস্থলে ফিরতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত গৃহস্থ-কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে ব্যবস্থা নিলে বন্যায় ক্ষতি, প্রাণহানি ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০