সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে গত দুই বছর ধরে চলমান ডলার সংকটে নির্মাণ খাতে দেখা দিয়েছে মন্দা। আর সিমেন্ট খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এসব কারণে লোকসানে কনফিডেন্স সিমেন্টে তাদের রেডিমিক্স কারখানা বন্ধ করতে বাদ্য হয়েছে। অন্যদিকে কনফিডেন্স সিমেন্ট ঢাকা লিমিটেড নামে একটি সহযোগী কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য ৩৫ টাকা প্রিমিয়ামের মোট ৪৫ টাকা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে; যা অদূরদর্শী বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
কনফিডেন্স সিমেন্ট কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরুর পর এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১২ লাখ টন। সময়ের সঙ্গে কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবসা সিমেন্টে উৎপাদনের পাশাপাশি এগ্রিগেট এবং রেডিমিক্স কংক্রিট তৈরি ব্যবসায় সম্প্রসারিত হয়। বেশ কয়েক বছর ভালো চললেও এ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত নির্মাণ খাতের মন্দা এবং নতুন করে রেডিমিক্স ব্যবসায় ভ্যাট আরোপিত হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির রেডি মিক্স কংক্রিটের ব্যবসা সংকটে পড়ে যায়। গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে ভাড়াটিয়া বা ক্রেতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে বর্তমানে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ কারখানা ভাড়া কিংবা পুরো কারখানা বিক্রয়ের চেষ্টা কররে।
এতে ব্যর্থ হয়ে রেডিমিক্স কারখানা বন্ধ করতে বার্ধ্য হয়। অপরদিকে কনফিডেন্স সিমেন্টের পর্ষদ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান তিনটি শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করা হবে। ৩৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি রাইট শেয়ারের ইস্যু মূল্য হবে ৪৫ টাকা। কনফিডেন্স সিমেন্ট ঢাকা লিমিটেড নামে একটি সহযোগী কোম্পানিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি মেয়াদি ঋণ পরিশোধের জন্য রাইট শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এর জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান পরিপালন সাপেক্ষে রাইট শেয়ার ইস্যু করা হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। বিএসইসির কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাইট শেয়ার ইস্যু-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে।
আরও জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল ৪০৯ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের ছিল ৪৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় বিক্রয় কমেছে ৪৬ কোটি টাকা। যদিও সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮ টাকা ৭৩ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সায় (পুনর্মূল্যায়িত)। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৪ টাকা ৭৫ পয়সায়। আর সমাপ্ত ২০২৪ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডায় বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে আগামী ২৩ অক্টোবর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বার্ষিক সাধারণ সভা ডেকেছে কোম্পানিটি। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বরের কনফিডেন্স সিমেন্টের শেয়ার সর্বশেষ ৭৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আর গত ২৬ পেপ্টেম্বর সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫৮ টাকা ৮০ পয়সা। আর গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫৭ টাকা ৫০ থেকে ৮৯ টাকা ৭০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ইপিএস অনুপাতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেতিবাচকভাবে দেখছে। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ারদরে।
দেশের সবগুলো সিমেন্ট কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা আট কোটি টন। ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানি বিঘ্নিত হওয়ায় কারখানাগুলো গত বছরের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন উৎপাদন করেছে। অন্যদিকে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা চলছে। এসবের প্রভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। এসবে কারণে উৎপাদনও ৭০-৭৫ শতাংশ কমেছে। গত কয়েক মাসের সিমেন্টের দাম কমেছে ব্যাগপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মূলত ব্যাংকের পেমেন্ট দেয়ার জন্য কোম্পানিগুলো দাম কমিয়ে টাকা নগদায়ন করেছে। এ অবস্থায় আগামী ৫ বছর সিমেন্টের প্রবৃদ্ধি হবে না। ফলে এখন এ খাতের কেউ যদি উৎপাদন সক্ষমতা কিংবা নতুন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে জানার জন্য কোম্পানির সচিব দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি রিসিভ করেননি। পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। উল্লেখ, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩২ দশমিক ১৩ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।