চালের বিকল্প হিসেবে কিছু পণ্য ব্যবহূত হলেও ভাত এখনও বাংলাদেশিদের প্রধান খাদ্য। ফলে চালের বাজার একটু এদিক-সেদিক হলে তা আলোচনায় আসে। কারণ সীমিত ও নিম্ন আয়ের লোকজনের ভোগান্তি বাড়ে। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির উদ্যোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদন সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কিছুটা কমাবে বলেই ধারণা।
খবরে বলা হয়, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর গড়ে আট শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। সেজন্য চাল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য রয়েছে। এই শুল্ককর পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনতে অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চালের দাম বাড়তেই পারে। দাম বাড়লে কৃষকের লাভবান হওয়ার কথা। কিন্তু চালের দাম বাড়ে মিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে। কারণে-অকারণে চাল সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন তারা। এর আগে যতবারই চালের দাম বেড়েছে, ততবারই মিলারদের কারণেই বেড়েছে। কিন্তু সুফল পান না কৃষকরা।
কৃষিতে আমাদের সাফল্য অনেক। কৃষিতে বিভিন্নভাবে ভর্তুকি-প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি করা হলেও কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। একদিকে কষ্টে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান না, অন্যদিকে অভাবের সময় বেশি দামেই তাদের ধান-চাল কিনতে হয়। এখনও দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৬ শতাংশ কৃষিতেই নিয়োজিত। তাই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় বাজারের ভারসাম্য আনা জরুরি।
বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপৎকালীন মজুত গড়ে তোলা (নিরাপত্তা মজুত), সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ (ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা ও টিআর), মূল্য স্থিতিশীলতা অর্জনে খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস), কৃষক ও ভোক্তাবান্ধব খাদ্যমূল্য কাঠামো অর্জন এবং দরিদ্র ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত জনগণকে খাদ্য সংগ্রহে সহায়তা দেয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে ‘অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য নীতিমালা, ২০১০’ অনুসারে বিভিন্ন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এ নীতিমালা প্রায়ই লঙ্ঘিত হয়। প্রায়ই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের যোগসাজশে মিলাররা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এ প্রবণতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তথ্যগত সীমাবদ্ধতায় চাল নিয়ে সংকট হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। চালের উৎপাদন, মজুত, দাম, আমদানি প্রভৃতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগগুলো যেন অভিন্ন তথ্য দিতে পারে, সে লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্যের ভিন্নতা বাজারকে অস্থির করে। যেভাবেই হোক, প্রধান ভোগ্যপণ্য চাল-আটার বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।