*কয়েকলাখ মানুষ পানিবন্দী
*সড়ক দিয়ে চলছে নৌকা-ভ্যান
*স্থবির হয়ে পরেছে স্বাভাবিক কর্মকান্ড
প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফতুল্লা,সিদ্ধিরগঞ্জ,ডেমড়া,কদমতলী,শ্যামপুরের নিম্মাঞ্চল। এসব এলাকার বেশীরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িতে প্রবেশ করেছে ময়লা, দূর্গন্ধযুক্ত পানি। সড়কে রিকশা, গাড়ীর পরিবর্তে চলছে নৌকা,ভ্যান। ভারী বর্ষনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় স্থবিরতা নেমে এসেছে এসব এলাকায়। স্বাভাবিক কর্মকান্ডে গতি হারিয়ে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে কয়েকলাখ মানুষ। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। গত ৫ আগষ্টের পর সাংসদ, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আত্মগোপনে চলে যায়। জনদূর্ভোগ দেখার আর কেউ না থাকায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এ সমস্যা সমাধানে কে এগিয়ে আসবে, কে সমাধান করবে? এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।
ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরো দেখা গেছে, কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে চমর ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বৃষ্টি পানি চলাচলের রাস্তা ছাপিয়ে বাড়ীর আঙ্গিনা এবং মানুষের বসত ঘরে প্রবেশ করেছে। কোথাও হাটু,কোমর কিংবা বুক সমান পানি জমে। চলাচলের সড়কে রিকশা বদলে চলছে ভ্যান,নৌকা। অনেকে আবার বৃষ্টির পানি মারিয়ে জীবিকার টানে ছুটে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। টানা বর্ষনে বসতঘরে পানি প্রবেশ করার নিরাপদে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেক বাসিন্দা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থায়ী সমাধান চায় ডিএনডিবাসী। এরআগে নারায়ণগঞ্জ-৪আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান পানি বন্দী এলাকা পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন এ সমস্যা কয়েকদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। কিন্তু এক বছরেও এ সমস্যা সমাধান হয়নি। তবে লালপুর পৌষাপুকুরপাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প বসিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা করলেও,বর্তমানে সে উদ্যোগ মুথ থুবড়ে পড়েছে।
ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুরপাড় সড়কে রিকশার পরিবর্তে ভ্যান এবং নৌকা চলতে দেখা গেছে। এই সড়কের দুইপাশে কয়েকলাখ মানুষের বসবাস। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে এসব এলাকার মানুষ। মানুষের বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করেছে। শুধু এই এলাকায়ই নয় পাশ্ববর্তী ইসদাইর,গাবতলী তাগারপার,আজমেরীবাগ,সস্তাপুর,লালখা,রামারবাগ,কোতালেরবাগ,সস্তাপুর এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী। বাড়ীর আঙ্গিনা, রান্না ঘর, টিউবওয়েল, বাথরুম পানির নিচে তলিয়ে আছে। এখানেই শেষ নয়, এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃত্রিম জলাবদ্ধতার ফলে প্রভাব পরেছে এলাকার স্বাভাবিক কর্মকান্ডেও।
ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের শহীদ নগর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শ নগর, নূরবাগ, পিলকুনী, তক্কার মাঠ সহ আশপাশের প্রায় বেশ কয়েকটি গ্রামে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পানিতে। ঘরবন্দী জীবন যাপন করে এসব এলাকার বাসিন্দারা। কুতুবপুর ইউনিয়ন সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। ড্রেন ব্যবস্থা না থাকার কারণে অল্প সময়ে তলিয়ে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ডোবা,নালা ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি মানুষের বসতবাড়ি, ঘরে প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক এলাকায়। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে ময়লা পানিতে। মিজমিজি এলাকায় গিয়ে মানুষের বসতবাড়ীতে পানি দেখাগেছে। ময়লা পানিকে সঙ্গী করেই এই এলাকার মানুষের বসবাস। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ভেরি বাঁধের ভেতরের এসব এলাকাগুলো সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি বেরিয়ে যেতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় বছরে বেশীরভাগ সময়ে এসব এলাকার কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা থাকে। দু’দিনের বৃষ্টির কারণে পুরো এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গত বছর জলাবদ্ধতা খবরে এলাকাবাসীর কাছ ছুটে এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান। জলাবদ্ধতা নিরসনে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন। আগামী বছর থেকে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।