বসুন্ধরার দুই প্রতিষ্ঠান খেলাপির তালিকায়

রোহান রাজিব: বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকে ঋণখেলাপি হলো দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে গ্রুপটির দুই প্রতিষ্ঠানের ৩৪২ কোটি টাকার ঋণখেলাপি করে দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের ১৭৪ কোটি টাকা এবং বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৬৭ কোটি টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যমতে, ২০১০ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানির জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় সাইড এলসি বা ঋণপত্র খোলে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিক্রেতাকে প্রতিষ্ঠান দুটোর পক্ষে গ্যারান্টি দেয় আইএফআইসি ব্যাংক। দেশে পণ্য আসার পর ব্যাংক এলসির দায় বিদেশি বিক্রেতাকে পরিশোধ করে দেয়। তবে যথাসময়ে প্রতিষ্ঠান দুটি ব্যাংকের এলসি দায় সমন্বয় করেনি। পরবর্তী সময় ব্যাংক দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ফোর্স লোন সৃষ্টি করে। ফোর্স ঋণ সৃষ্টির পরও কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে বসুন্ধরা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি করে দেয় ব্যাংকটি। এ ছাড়া দুই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সিসি ঋণও ছিল। এসব ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা হয়নি। তাই সিসি ঋণগুলো খেলাপির তালিকায় যুক্ত করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো আইএফআইসি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান দুটোর এলসির বিপরীতে সৃষ্ট ঋণখেলাপি তালিকায় যুক্ত করে। ওই বছরই বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ১৬৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণের ডাউনপেমেন্ট দিয়ে প্রথমবারের মতো ?পুনঃতফসিল বা ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা নেয়। তবে এ সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিত করলেও কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিষ্ঠান দুটির ঋণখেলাপি করে ব্যাংক। একই বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়ে ঋণগুলো নিয়মিত করা হয়। যদিও ধারাবাহিকভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে তৃতীয়বারের মতো ঋণগুলো খেলাপি করে আইএফআইসি ব্যাংক। গত বছরের ২৬ জুন আবারও নির্দিষ্ট পরিমাণের ডাউন্টপেমেন্ট দিয়ে তৃতীয়বারের মতো পুনঃতফসিল সুবিধা নেয়া হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটোর ঋণ আবার নিয়মিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির দুটি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। জানা যায়, তৃতীয়বারের মতো ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নেয়ার পর প্রতিষ্ঠান দুটো এরপর থেকে কোনো কিস্তি পরিশোধ করেনি। তাই ব্যাংক প্রতিষ্ঠান দুটিকে গত ৩১ মে চতুর্থবারের মতো খেলাপি করে। এদিকে অপারেশনাল ব্যয়ের জন্য বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আইএফআইসি ব্যাংক থেকে সিসি ঋণ নেয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটোর ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ৫৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। তবে এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণে প্রথমবার ২০২১ সালে ঋণ দুটো খেলাপির তালিকায় যুক্ত করা হয়। বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়েও ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে এ ঋণগুলোও চলতি বছরের ৩১ মে খেলাপি করে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) গত আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, দুটি প্রতিষ্ঠানের এলসির দায়ে সৃষ্ট ঋণ ও সিসি ঋণের ৩৪২ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঋণগুলো এখনও পুনঃতফসিল করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইএফআইসি ব্যাংকের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি ঋণ আদায় করার জন্য। ইতোমধ্যে চতুর্থবারের মতো পুনঃতফসিল করার জন্য গ্রুপটি থেকে বলা হয়েছে। তবে এখনও তারা নির্দিষ্ট পরিমাণের ডাউনপেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল সুবিধা নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বসুন্ধরা পেপার মিলসের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ৩০ জুন ২০২৩ কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসেই কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩৬৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এদিকে গত মার্চ শেষে বসুন্ধরা পেপার মিলসের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা। যদিও গত অর্থবছর প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। এ সময় বসুন্ধরা পেপার মিলস মুনাফা করেছে ৩১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় এক টাকা ৮১ পয়সা। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ সময় ইপিএস ছিল দুই টাকা ২৬ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০