বিশ্বজুড়ে বর্তমানে জীবিত থাকা ৩৭ কোটিরও বেশি বালিকা ও নারী বা প্রতি আটজনের মধ্যে একজন বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন হেনস্তার কবলে পড়েছেন বলে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে। বুধবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, এটিই বিশ্বব্যাপী যৌন সহিংসতার সমস্যাবিষয়ক প্রথম জরিপ। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার মাধ্যমে নারী ও বালিকারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২৪ থেকে ৩১ কোটি বালক ও পুরুষের শিশুকালে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্তার মতো অভিজ্ঞতা আছে।
সংস্থাটি বলছে, তাদের জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা যৌন সহিংসতার বিষয়টি জানানো ও শনাক্ত করতে শিশুদের সাহায্য করতে এবং আইন কঠোর করার মতো পদক্ষেপ নিতে বিশ্বব্যাপী জোরালো উদ্যোগ নেয়ার জরুরি প্রয়োজনকে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি শিশু রয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে ১৪ বছরের নিচের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিশু বাড়িতে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয় বলে বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিশুদের সুরক্ষায় অগ্রগতি হলেও সহিংসতা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে উদ্বেগজনকভাবে। দেশে ৩০ লাখের বেশি শিশু শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে আছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। ২০ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার আগেই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে। প্রতি দুটি মেয়েশিশুর মধ্যে একটির বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। প্রায় অর্ধেক শিশুর জš§নিবন্ধন নেই। এখনও লাখো শিশু রাস্তায় বসবাস করে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিশুদের ক্ষেত্রে সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষায় পর্যাপ্ত আইন থাকলেও শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে, সহিংসতার শিকার হচ্ছে, এটি দুঃখজনক। শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রচলিত আইনের বাস্তবায়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ ছাড়া শিশুর উন্নয়ন ও কল্যাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
আজকের শিশুই দেশের আগামী দিনের কর্ণধারÑএ কথা মাথায় রাখতে হবে। শিশুর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন সাময়িক কোনো বিষয় নয়, এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলও আছে। শিশুরা যদি সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে, সেটা যেমন দেশের জন্য মঙ্গলকর, তেমনি শিশুরা সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হলে তা নানা রকম নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। একটা রাষ্ট্র ও সমাজ কতটা মানবিক, কতটা সংবেদনশীল, তা অনেকটাই বোঝা যায় শিশুদের প্রতি আচার-আচরণ, বিবেচনাবোধ এবং গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি থেকে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য যদি হয় সত্যিই একটি মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, তাহলে শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে।