সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন

কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, উচ্ছ্বসিত সমুদ্রতরঙ্গ, দিগন্তপ্রসারী ঝাউবন, উঁচু পাহাড়ের চূড়া, সুদৃশ্য প্যাগোডা, বৌদ্ধ মন্দির প্রভৃতি নিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা সংরক্ষিত বনভূমি সমৃদ্ধ ৯৬ কিলোমিটার পাহাড়ের সারি এখানকার অন্যতম বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলে বিবেচিত। সমুদ্রতট ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কটেজ, মোটেল এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে দেশের পর্যটনশিল্প দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর দেশের পর্যটন নগরীতে আসেন লাখো মানুষ।

দুর্ভাগ্যজনক হলো দেশের প্রধান পর্যটনস্পট রক্ষায় আমাদের উৎাসীনতা রয়েছে। কিন্তু অযত্ন-অবহেলাসহ নানা কারণে জৌলুস হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গত তিন বছরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে সৈকতের আয়তন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে গুপ্তখাল ও বড়সড় গর্তের। গোসলে নেমে খাল বা গর্তে আটকে পড়ে প্রাণহানি ঘটছে পর্যটকদের। সৈকতে ভাঙন নিয়ে গবেষণার পর সম্প্রতি কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষকরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন তারা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় ভাঙনের বেশ কয়েকটি কারণ, সঙ্গে ভাঙন রোধের কিছু সুপারিশও করা হয়।

শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের কোস্টলাইনের (সৈকত) ভাঙন রোধে টেকসই ও স্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণসহ তিন ধরনের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। তিন ধরনের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার আওতায় এতে সৈকত রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জš§ায় এমন গাছপালা রোপণ, পর্যটকদের পারাপারের রাস্তা নির্মাণ, ঘেরা-বেড়া তৈরি, জিওব্যাগ স্থাপন প্রভৃতি এবং ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের ক্ষয় রোধে বিচ গ্রোইন (বাঁধ) ও দেয়াল নির্মাণ।

সাগরলতা সমুদ্রভাঙন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু বালিয়াড়িতে সাগরলতা নষ্ট করে সেখানে ঝাউয়ের মতো তৃতীয় স্তরের বৃক্ষ প্রথম স্তরেই রোপণের প্রকল্প প্রতিবছর গ্রহণ করা হয়। বস্তুত ঝাউগাছের শিকড় বালিয়াড়িতে তেমন বিস্তার লাভ করে না। তাই সেটির চারপাশের বালিয়াড়িকে আঁকড়ে ধরতে পারে না। সামান্য সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে গাছ উপড়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্ষার পানির তীব্র স্রোতে বিভক্ত হয়ে পড়ে সমুদ্রসৈকতের বেলাভূমি। তীরে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে ঝুপড়ি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে কয়েকটি চক্র। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

জোয়ারের পানিতে সৈকত পারের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে বিপুল ঝাউগাছ। সামান্য কিছুটা সংস্কার হলেও তা পরিকল্পিত নয়। বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা বলা হলেও ভাঙন, পরিবেশ দূষণে সৈকত জৌলুস হারচ্ছে। সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গেলে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে কক্সবাজার। সরকার সে লক্ষ্যে দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০