অস্টিওপোরোসিসের ফলে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যাওয়ায় হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। অস্টিওপোরোসিসকে অস্থিক্ষয় বা হাড়ের ক্ষয়রোগও বলা হয়। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সে হাড় পূর্ণতা লাভ করে। ৪০ বছরের পর থেকে হাড় ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারাতে থাকে। ফলে হাড়ের পরিবর্তন হয় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ৫০ বছর বয়সে ১৫ শতাংশ ও ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সে ৩০ শতাংশ নারীর হিপ বোন বা নিতম্বের হাড় ভেঙে যায়।
অস্টিওপোরোসিস রোগটি কী?
হাড়ের ভেতরে ঘনত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের দিকে হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের গঠন ও ক্ষয় একই গতিতে চলতে থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সে হাড়ক্ষয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই ক্ষয় বাড়তে বাড়তে হাড় যখন নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, সেই অবস্থাকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়।
অস্টিওপোরোসিস রোগের প্রাদুর্ভাব
এই রোগে নারী-পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হয়। তবে নারীদের বিশেষ করে মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে হাড়ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন ৭০ বছর বয়সে কমতে শুরু করলে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি তিন মহিলার মধ্যে একজন ও প্রতি পাঁচ পুরুষের মধ্যে একজন অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।
কাদের ঝুঁকি বেশি
অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন
মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ-পরবর্তী মহিলারা
এশীয় বা ককেশিয়ানরা
যাদের পরিবারে কারও অস্টিওপোরোসিস আছে
যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন না
যারা ব্যায়াম করেন না
যাদের ওজন কম
ধূমপায়ী ও অ্যালকোহল পানকারীরা
কিছু অসুখ অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন যাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম বা হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে তারা
কিছু ওষুধ অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন তিন মাসের অধিক সময় ধরে কর্টিকস্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে। খিঁচুনি, স্তন বা প্রস্টেট ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ খেলে।
অস্টিওপোরোসিসের পরিণতি
অস্টিওপোরোসিস একটি নীরব ক্ষয়রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় এর তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এটি তখনই যন্ত্রণাদায়ক হয় যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙে যায়
খুবই সামান্য পরিমাণ আঘাত লাগলে হাড় ভেঙে যেতে পারে
মেরুদণ্ডের হাড়, নিতম্ব বা হিপ জয়েন্ট, কবজি বা রিস্ট জয়েন্টের হাড় ভাঙার পরিমাণ বেশি লক্ষ করা যায়।
যেভাবে প্রতিরোধ করবেন
শৈশব, কৈশোর অথবা যৌবনকালে অর্থাৎ বাড়ন্ত বয়সে হাড়ের বৃদ্ধিসাধন হয়। এ সময়টাই হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আসল সময়। এ সময় হাড়ের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠন করে নিতে পারলে তা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় ও ভাঙার ঝুঁকির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্যালসিয়াম ও ফসফেট কমে দুর্বল হতে থাকে। ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। তাই হাড় শক্তিশালী রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। খাদ্যতালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত করুন, এতে আপনার পেশি সুগঠিত হবে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’-যুক্ত খাবার ও প্রচুর পরিমাণে ফল খান, যাতে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’,
‘কে’-সহ খনিজ পদার্থ, যেমন ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন বেশি থাকে। এসব উপাদান হাড় গঠনে সহায়তা করে।
অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা
চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো হাড়কে শক্তিশালী করে তোলা, হাড়ের ক্ষয় ও ভাঙার ঝুঁকি কমানো। এর চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যালেন্ড্রনেট সোডিয়াম, রিসড্রনেট সোডিয়াম, ইবান্ড্রনিক এসিড, সিলেক্টিভ ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর মডুলেটর, প্যারাথাইরয়েড হরমোন চিকিৎসা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি প্রভৃতি। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, অস্টিওপোরোসিস-মুক্ত থাকুন।
ডা. এম ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল,
ধানমন্ডি, ঢাকা
যোগাযোগ: ০১৭১৭০৮৪২০২