মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: অবশেষে প্রত্যাহার হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আরএন স্পিনিংয়ের মামলা। উচ্চ আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিলে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার কোনো জটিলতা থাকবে না। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেতে বাকি। আদালত বন্ধ থাকায় এমটি হচ্ছে। কাগজপত্র হাতে পেলে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভাসহ অন্যান্য কাজ করতে কোনো বাধা থাকবে না।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কিত একটি চিঠি দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে। আরএন স্পিনিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (আইন) মো. মাহবুবের রহমান চৌধুরী। চিঠিতে পরিচালকদের জরিমানা পরিশোধ এবং মামলা প্রত্যাহারে আদেশপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরএন স্পিনিং মিলসের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে সার্টিফাইড কপি বিএসইসি কার্যালয়ে জমা দেবে। সার্টিফাইড কপি জমা দেওয়ার পর তারা এজিএম আহ্বান করার জন্য বিএসইসির অনুমতি চাইবে।রাইট শেয়ার নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে
২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরএন স্পিনিংয়ের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর,
বন্ধক ও উপহার দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিএসইসি। এ নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন কোম্পানির পরিচালকরা। মামলার রায় কোম্পানির পক্ষে এলে বিএসইসি এর বিরুদ্ধে আপিল করে। বিএসইসির আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে রায় স্থগিত করা হলে এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন কোম্পানির পরিচালকরা। সবশেষ চলতি বছরের ৮ মে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে এ মামলার নিষ্পত্তি করে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে আরএন স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব হান্নান মোল্লা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি। আইনি কাগজ হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো। কারণ এখানে বলে দেওয়া থাকবে আমাদের পরবর্তীতে কী করণীয়।’
কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি মিটে গেলে আমাদের এজিএমের ব্যাপারে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে আমাদের আইনজীবীরা কাজ করছেন।’
একই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী মো. নূর নবী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মামলাটির কিছু ফরমালিটিজ বাকি রয়েছে। সে কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে। আশা করছি শিগগির এই জটিলতা কেটে যাবে।’
বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। এর পরের বছর প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দেয় ৩৫ শতাংশ। এরপরই রাইট শেয়ার সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়িয়ে যায়। ফলে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ গত চার বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। শেয়ারহোল্ডাররা তাকিয়ে রয়েছেন কোম্পানিটি মামলার দিকে। এর ফয়সালা হয়ে গেলে তারা চার বছরের লভ্যাংশ পাবেন।
এদিকে গতকাল কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ২৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। আর দিনজুড়ে এর দর ওঠানামা করে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭ টাকার মধ্যে। ৫৫৫ হাওলার মাধ্যমে সারা দিনে মোট শেয়ার লেনদেন হয় সাত লাখ ৫৫ হাজার
৪২৯টি। গত এক বছরের মধ্যে এ শেয়ার সর্বোচ্চ ২৭ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১৬ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৪৮ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে।
Add Comment