গোলাপ ফুল চাষ

গোলাপকে ফুলের রানি বলা হয়। বাড়ির আঙিনায় অনেকে বাগান করতে পছন্দ করেন। সেখানে অনেক ফুলের পাশাপাশি গোলাপের অবস্থান লক্ষণীয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ হয়। বর্তমানে এটি একটি লাভজনক পেশা। বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ করতে হলে এর সঠিক চাষ-পদ্ধতি সম্পর্কে জানা দরকার।

বাজার সম্ভাবনা

সারা বছরই গোলাপের চাহিদা থাকে। সৌখিন মানুষ ঘর সাজানোর জন্য ফুল ব্যবহার করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে থাকে গোলাপ। দেশের প্রায় সব জায়গায় ফুলের দোকান চোখে পড়ে। এসব দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। দেশি বাজারের পাশাপাশি গোলাপ রফতানিও হয়ে থাকে।

জাত

গাছ ও ফুলের আকারভেদে গোলাপের অসংখ্য জাত রয়েছে। গোলাপ সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। হাইব্রিড টি, ফ্লোরিবান্দা, পলিয়েন্থা, মিনিয়েচার ছাড়াও গোলাপের অনেক জাত রয়েছে।

বংশবিস্তার

গোলাপের বংশবিস্তারের জন্য অবস্থাভেদে শাখা কলম, দাবা কলম, গুটি কলম ও চোখ কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ উৎপাদন করে তা থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই থেকে আগস্টে ও ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে শেষ করতে হয়।

 

জমি নির্বাচন

ছায়াবিহীন উঁচু জমিতে গোলাপ ভালো জšে§। তাই রোদ ও খোলামেলা জায়গা গোলাপ চাষের জন্য ভালো। তবে মোটামুটি ঠাণ্ডা আবহাওয়া আদর্শ। গোলাপ চাষের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধাসহ বেলে দোআঁশ, দোআঁশ অথবা এঁটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ ছয় থেকে সাতের মধ্যে থাকা উচিত।

জমি তৈরি

নির্বাচিত জমি আড়াআড়ি চাষের মাধ্যমে চারা রোপণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হবে এবং মই দিয়ে তা সমান করে নিতে হবে। এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা ও সুবিধামতো উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝখানে পানি নিষ্কাশন ও সেচের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর ও ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে। চারা রোপণের কিছুদিন আগে গর্ত করে খোলা রাখা যেতে পারে, যাতে গর্তের জীবাণু ও পোকামাকড় মারা যায়। গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর ওপরের মাটি আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সঙ্গে ১০ কেজি কম্পোস্ট সার, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। মাটির সঙ্গে প্রয়োজনমতো গোবর মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে। বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর ও সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করা উচিত। বড় জাতের জন্য ৬০ সে.মি. ও ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

চারা রোপণ

বাগানে নতুন চারা রোপণ না করে এক বছরের পুরোনো চারা রোপণ করা উত্তম। রোপণের পর চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। প্রথমে পলিথিন ব্যাগ বা মাটির টব থেকে চারা বের করে দুর্বল শাখা ও রোগাক্রান্ত শিকড় কেটে ফেলতে হবে। জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত তিন-চার সে.মি. ওপরে রাখতে হবে। চারা রোপণের পর শক্তভাবে মাটি চেপে দিতে হবে। চারাটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের পর চারার গোড়ায় পানি দেওয়া উচিত। সে সঙ্গে দুই থেকে তিন দিন ছায়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। আশ্বিন মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পৌষেও রোপণ করা যায়।

সার প্রয়োগ

গোলাপের ভালো ফলন পেতে জৈবসারের বিকল্প নেই। জৈবসার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ ভালো থাকে। সেক্ষেত্রে গবাদিপশুর গোবর ও আবর্জনা পচা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সেচ

রোপণের পর চারার গোড়ায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হয়। নতুন ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে ১০ দিন পর একবার সেচ দিলেই চলে। তবে প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও তার প্রতিকার

গোলাপ বাগানে সাধারণত বিটল ও রেড স্কেল পোকা দেখা যায়। এসব পোকা ম্যালথিয়ন বা ডাইমেক্রন ছিটিয়ে দমন করা যায়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

রোগবালাই ও তার প্রতিকার

গোলাপ বাগানে বেশ কয়েক ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। এগুলোর বেশিরভাগই ছত্রাকজনিত। যেমন ডাইব্যাক, কালো দাগ পড়া রোগ, পাউডারি মিলডিউ প্রভৃতি। রোগ নিরাময়ের জন্য আক্রান্ত স্থান কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। থিওভিট বা সালফার ডাইথেন এম-৪৫ পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার স্প্রে করা যেতে পারে।

ছাঁটাইকরণ

গোলাপের নতুন ডালে বেশি ফুল হয়। তাই পুরোনো ও রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করা প্রয়োজন। প্রতি বছর ডালপালা ছাঁটাই করলে গাছের গঠন-কাঠামো সুন্দর ও সুদৃঢ় হয়। বড় আকারের ফুল ফোটে। ছাঁটাই করার পর ফুলগাছে একই স্থানে একাধিক ফুলকুঁড়ি জš§ায়। সব কুঁড়ি ফুটতে দিলে ফুল তেমন বড় হয় না। তাই বড় ফুল ফোটার জন্য পুষ্টিকর কুঁঁড়ি রেখে অন্যগুলো কেটে দিতে হবে।

ফুল সংগ্রহ

ফুল ফোটার আগে গাছ হতে ফুল সংগ্রহ করতে হয়। সংগ্রহের পর ফুলের ডাঁটার নিচের অংশ পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় রাখলে ফুল ভালো থাকে। হ

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০