বিনিয়োগের অনুকূলে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডে অনীহা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিনিয়োগের জন্য মোটামুটি নিরাপদ হিসেবে অভিহিত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এখন তলানিতে। অথচ বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) রয়েছে ১৫ পয়েন্টের নিচে। অর্থাৎ বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে এসব ফান্ডের ইউনিট। এরপরও এসব ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। ফান্ডগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ভালো রিটার্ন না পাওয়ায় এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। তালিকাভুক্ত ৮০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের পিই রেশিও ১৫ পয়েন্টের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ফান্ডের ইউনিটের মূল্য-আয় অনুপাত রয়েছে ১০-এর নিচে। নিয়ম অনুযায়ী এসব ফান্ডে বিনিয়োগ ঝুঁকিহীন। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়ায় এগুলোর দর এবং চাহিদা কমে গেছে। অথচ একসময় তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে ছিল। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যখন ধস নামে, তখন অন্যান্য খাতের সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডও মুখ থুবড়ে পড়ে। কমে যায় তালিকাভুক্ত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাত ঘুরে দাঁড়ালেও কোনো গতি হয়নি মিউচুয়াল ফান্ডের।

বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধনের মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের (মেয়াদি ও বেমেয়াদি) অবদান। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বাজার মূলধনে মিউচুয়াল ফান্ডের অবদান ২০ শতাংশেরও বেশি। আর বিশ্বব্যাপী উন্নত পুঁজিবাজারগুলোর বাজার মূলধনে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অবদান মিউচুয়াল ফান্ডের।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘ফান্ডগুলো মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এখান থেকেই তাদের আয় হয। বাজার ভালো থাকলে ফান্ডগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। আবার নিম্নমুখী থাকলে বা অস্থিতিশীল থাকলে তাদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যায়। ২০১০ সালের পর থেকে বাজার টানা স্থিতিশীল নেই। সে কারণে হয়তো ফান্ডগুলো ভালো করতে পারছে না। আর এর জের ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও কমে গেছে।’

একই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সবার আগে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। কারণ ভালো কোম্পানি না থাকলে সেখানে কেউ-ই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। আমাদের পুঁজিবাজারে চাহিদার তুলনায় ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। বাজারের স্বার্থে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই।’

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ফার্স্ট জনতা মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৫.৮৬ পয়েন্ট, এবিবিফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৫.১৬ পয়েন্ট, এটিসিএসএলজিএফের পিই ৬.৯ পয়েন্ট; ইবিএলফার্ মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৭.২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। একইভাবে ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৫.৫৩ পয়েন্ট, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্টের পিই ৫.৮ পয়েন্ট, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড পিই ৫.৩৪ পয়েন্ট, আইসিবি২এনআরবির পিই ৯.৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এছাড়া তালিকাভুক্ত অন্যান্য ফান্ডের মধ্যে আইসিবি সোনালী ওয়ানের পিই ৯.৭৬ পয়েন্ট, আইএফআইসি ফার্¯ে¡র পিই ৫.২৯ পয়েন্ট, আইএফআইএল ইসলামিক ওয়ানের পিই ৮.৮৯ পয়েন্ট, এনএলআই ফার্স্টের ৮.২৩ পয়েন্ট; পিএইচপির পিই ৫.৬৬ পয়েন্ট; পপুলার লাইফ ফস্টের ৫ পয়েন্ট; প্রাইম ফার্স্ট আইসিবিএ মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৬.৪৯ পয়েন্ট, এসইবিএল ফার্স্টের পিই ৯.০৯ পয়েন্ট, এসইএমএলএলইসি’র পিই ৯.৬৯ পয়েন্ট ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের পিই ৫.৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর বাইরে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ফান্ডের পিই অবস্থান করছেন ১৫-এর নিচে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০