পলাশ শরিফ: দুই বছর পর পিছিয়ে থাকার প্রবণতা কেটেছে। ব্যান্ডউইটথ রফতানি-লিজের ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস কোম্পানি (বিএসসিসিএল)। সর্বশেষ আর্থিক বছরে কোম্পানিটির আয় ও মুনাফা বেড়েছে। বেসরকারি ছয় আইসিটি কোম্পানির সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতাসহ বেশ কিছু কারণে এর আগের দুই বছরে পিছিয়ে পড়ে বিএসসিসিএল। এর জের ধরে ব্যান্ডউইটথ রফতানির উদ্যোগ নেয় কোম্পানিটি।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে বিএসসিএলের আয় দাঁড়িয়েছে ১০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকায়, যা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বেশি। এ সময়ে আয়ের ছয়টি খাতের মধ্যে তিনটিতেই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে ব্যান্ডউইটথ রফতানি আয় প্রায় পাঁচ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, আইপি ট্রানজিট চার্জ থেকে আয় প্রায় ১৩ কোটি চার লাখ টাকা ও আইপিএলসি ভাড়া থেকে আয় প্রায় ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বেড়েছে। আয়বৃদ্ধির জের ধরে বিএসসিসিএলের কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৯৩ পয়সা।
আলাপকালে বিএসসিসিএলের কোম্পানি সচিব আব্দুস সালাম খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশে ব্যান্ডউইটথ জোগানোর সক্ষমতা বিএসসিসিএলের রয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করা হয়েছে, এতে সক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে ব্যান্ডউইটথের দাম নিয়ে বিএসসিসিএলকে বেসরকারি আইটিসি অপারেটরগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। ওই কোম্পানিগুলো এখন আইটিসি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। যে কারণে গত দুই বছর আয়-মুনাফা কমেছে। সংকট কাটিয়ে উঠতেই ভারতে ব্যান্ডউইটথ রফতানি শুরু হয়েছে। মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্যান্ডউইথ রফতানি ও লিজই ঘুরে দাঁড়াতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রেখেছে। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
কোম্পানি সূত্র জানা গেছে, ‘দুর্যোগকালীন বিকল্প’ হিসেবে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেডÑএ ছয় কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কিন্তু সেই কোম্পানিগুলোই পরে বিএসসিসিএলের প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে ওঠে। আইটিসির মাধ্যমে আনা বিকল্প ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ বিএসসিসিএলের তুলনায় মূল্যসাশ্রয়ী হওয়ায় বিকল্পই মূল ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তাই প্রায় তিন বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ বাজার বেসরকারি ছয় আইটিসি অপারেটরের দখলে। অসম প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে কোম্পানিটি। এর জের ধরে আয় ও কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছিল। ২০১২ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকে সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিএসসিসিএলের আয় প্রায় অর্ধেক ও কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় সাড়ে চারগুণ কমেছিল।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে দুটি খাত থেকে বিএসসিসিএল ১২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আয় করেছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কোম্পানিটির আয় পাঁচ বছর আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে ৬১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। ২০১২ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৭৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১০ টাকা, যা ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় চারগুণ কমে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় নেমেছিল। আয়ের খাত ও সক্ষমতা বাড়লেও অসম প্রতিযোগিতার কারণেই পিছিয়ে পড়েছিল বিএসসিসিএল। ঘুরে দাঁড়াতেই ব্যান্ডউইটথ রফতানি ও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেব্ল সংযোগ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিএসসিসিএল। ২০০৮ সালে এটি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে প্রথম সাবমেরিন কেব্লের কল্যাণে বিএসসিসিএলের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ জোগানোর সক্ষমতা ছিল প্রায় ৪৫ জিবিপিএস, যা ২০১৬ সাল শেষে ৫০০ প্রায় ৫০০ জিবিপিএসে দাঁড়ায়। এ বিপরীতে দেশে ব্যাউন্ডউইটথের চাহিদা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৭ জিবিপিএস। এরপর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে আরও প্রায় দেড় হাজার ৫০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ যোগ হয়েছে। এদিকে এক হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে বিএসসিসিএলের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ১৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ১৬ কোটি ৪৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫১০টি শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে ৭৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে এক দশমিক ৭৩ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।