১৬ গ্রুপের হাতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণের ৫০%

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের ১৬টি বড় শিল্প গ্রুপ ও চার প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক ঋণই এদের কাছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু বড় ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে ঋণ আদায় নিয়ে চিন্তিত ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদ শাখা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের সূত্রমতে, ব্যাংকটির শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে রয়েছে এস আলম গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, এফএমসি, নাসা গ্রুপ, ওয়েস্টার্ন মেরিন, নাভানা, প্যাসিফিক টেলিকম ও এহসান গ্রুপ। এর মধ্যে এস আলম গ্রæপের কাছেই রয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ ঋণ।

ব্যাংকটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ মোট ২০ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ঋণগ্রহীতার তালিকায় প্রথমে আছে দেশের আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপ এস আলম। এ গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি ৮৪ লাখ টাকা। শুধু গ্রুপের নামেই ঋণ আছে এক হাজার ২৪২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েলস লিমিটেডের নামে ঋণ আছে ৭৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামের পোশাক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিনের মালিকানাধীন সাদ মুসা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৬৭৫ কোটি ৫৭ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরে ছিল ২৮৫ কোটি আট লাখ টাকা।

ব্যাংকটির বড় ঋণগ্রহীতা গ্রুপের মধ্যে আছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ইয়াসিন চৌধুরীর মালিকানাধীন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এফএমসি গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৬৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া নাসা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৪৯২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ৪৭৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা, নাভানা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৪৪৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ঋণ ৪৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আবু আলমের মালিকানাধীন এহসান গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৪৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

এর বাইরে ডেকো গ্রæপের ঋণের পরিমাণ ৩৬৫ কোটি টাকা, মিলিনিয়াম গ্রæপের ঋণের পরিমাণ ৩৫৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, শিপন ট্রেডার্সের ঋণের পরিমাণ ৩৪৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বিএসএম গ্রুপের মালিকাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঋণের পরিমাণ ৩৪২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, মোশারফ হোসেন মিন্টুর চিটাগং সিন্ডিকেটের ঋণের পরিমাণ ৩২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা, খালেদ গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ২৫২ কোটি টাকা, আবুল খায়ের গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ২১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ব্যবসায়ী আবুল বশর ও আবুল কালাম ভ্রাত্যদ্বয়ের মালিকানধীন টিকে গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা সূত্রমতে, ঋণখেলাপি তালিকায় গত মাসে যুক্ত হয় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আবু আলমের মালিকানাধীন এহসান গ্রুপ। এ গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৪৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এছাড়া এ ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় দুই বৃহৎ ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী গ্রুপ পাওনা পরিশোধে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়।

উভয় শাখার একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজের প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত দুই বছর ধরে এহসান গ্রুপ পাওনা পরিশোধ করবেন বলে একাধিকবার কথা দিলেও পাওনা পরিশোধ করেনি। ফলে এ গ্রæপের ঋণের বিপরীতে বন্ধকি থাকা এক হাজার ৩৩৯ শতাংশ জমি নিলামে বিক্রি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। তবে এতে যদি সাড়া না পাওয়া যায় তাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে ব্যাংকটি।

এছাড়া আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তারা বলেন, দুই শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে নিয়মিত পাওনা আদায় নিয়েও তারা চিন্তিত।

সদ্য খেলাপি হওয়া চট্টগ্রামের এহসান গ্রুপের কর্ণধার ও ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আবু আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যবসায় তো লাভ-লোকসান হবে। এটাই নিয়ম। একসময়ে আমাদের ব্যবসায়িক অবস্থান ভালো ছিল বলে আমি ঋণ নিয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় মন্দা হওয়ার কারণে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছি। এছাড়া আরও কিছু ব্যাংকে পাওনা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্যাংক নিময়ানুসারে যা করার তাই করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এফডিআরের সুদ নেমে এসেছে পাঁচ-ছয় শতাংশে। কিন্তু আমাদের এখনও দিতে হচ্ছে উচ্চ সুদ। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আট শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারে। এতে ব্যবসায়ীরা ঠিকে থাকতে পারবে।’

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০