স্থানীয় সরকারে সুশাসনের অনুকূল পরিবেশ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের সব দেশে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়। আর বাংলাদেশে তার উল্টো। এখানে স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করার জন্য নানা কৌশল চালু আছে। উন্নয়নের জন্য বাজেট দেওয়া হয় না। নিজেদের টাকায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও তা অনুমোদন পেতে গিয়ে বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র অনুকূল কাজ করার জন্য অনুকূল পরিবেশ পান না। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘সিটিস ফোরাম’ শীর্ষক এ সম্মেলনে দেশের তিন শতাধিক মেয়র অংশ নেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, পরিকল্পিত নগর দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাই উন্নয়নের মুখ্য ভূমিকা পালনকারী।

বিশ্বব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের এখানে সমবেত করার মাধ্যমে এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ করা খুবই ইতিবাচক। এর মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবন ও জ্ঞান আহরণে এ সম্মেলন ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের জন্য সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের সমস্যাগুলোর স্থানীয় সমাধানকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্পিকার বলেন, উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় সমাধান করতে হবে। সেই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

মিউনিসিপাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমএবি) সভাপতি মো. আবদুল বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেন হলেনস্টেইন, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রিডিরেক্টর চিমিয়াও ফান প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নগর বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণ মেনন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের নগরাঞ্চলগুলো অন্যান্য এলাকার চেয়ে আটগুণ বেশি উৎপাদনমুখী। এছাড়া নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। ঢাকার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দেশের মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপি) এক-পঞ্চমাংশ আসে এখান থেকে। এছাড়া শহুরে কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ নিশ্চিত করছে ঢাকা। দেশের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন ঢাকার দিকে ছুটছে। কিন্তু বিশ্বের সব সূচকে ঢাকার বসবাসযোগ্যতা খারাপ। অবস্থার উন্নয়নের জন্য পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন উদ্যোগের অগ্রগতি অনুসন্ধান করা দরকার। পাশাপাশি নীতি ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি। এছাড়া অবকাঠামোসহ বড় কিছু খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। এজন্য নেতৃত্ব, বিনিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী সভার পরে বিভিন্ন পর্বে দিনব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলনে। এতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইনসসহ বিভিন্ন দেশের সফল মেয়ররা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ সময় মেয়ররা দেশের পৌরসভার জন্য সরকারের বাজেট বাড়ানোর দাবি করেন। অনেকে সরকারি কর্মকর্তা ও এলজিইডির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। জনগণের কাছে যে উন্নয়নের কথা বলে ভোট নিয়েছি, তা আমরা করতে পারছি না। সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের কথাও শুনছেন না। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের অর্থায়নে কোনো উদ্যোগ নিতে চাইলেও তার সুযোগ দেওয়া হয় না। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকার কথাও তুলে ধরেন তারা।

এ সময় নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মেয়রই অনুক‚ল পরিবেশে কাজ করতে পারছেন না। মেয়রদের অনেক অভিযোগ আছে। তারা জনগণের প্রতিনিধি। তারা অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমরাও উন্নত দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারব। তবে শুধু সরকারকে অভিযোগ করে লাভ নেই উল্লেখ করেন তিনি বলেন, আমাদের কাজ করে যেতে হবে। চেষ্টা করে যাচ্ছি বলেই তো অনেক কাজ সম্ভব হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকার আগের থেকে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে এখন। বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাব দিয়ে আমরা বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। তিনি বলেন, আমার শহর কেমন হবে, তা আমিই জনগণকে নিয়ে ঠিক করব। নারায়ণগঞ্জকে কেউ সিঙ্গাপুর বানাতে চাইলে হবে না। নারায়ণগঞ্জ সিঙ্গাপুর হবে না। নারায়ণগঞ্জ যাতে আগের সমৃদ্ধ ও সুন্দর নারায়ণগঞ্জ ফিরে পায়, সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০