ক্ষুদ্র ব্যবসায় সফল চাকমা দম্পতি

জাহিদ হাসান শাকিল:  নিদি মণি স্টোর। ক্রেতার সমাগমে ব্যস্ত একটি দোকান। চা, কফি, আইসক্রিমসহ নানা পণ্য দিয়ে সাজানো দোকানটি। রাত ৮টা, তবুও দোকানি হয়ে ক্রেতাদের সেবা দিতে ব্যস্ত দীপা রানী চাকমা। সাভারের আশুলিয়ায় গাজীরচটের বুড়িরবাজার এলাকার ব্যস্ত জনপথে তার এই দোকান। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখেন। স্বামী ও স্ত্রী দুজন ভাগ করে পরিচালনা করেন। একমাত্র শিশুমেয়ে নিদি মণির নামে দোকানের নাম রেখেছেন তারা।

দীপা রানী চাকমা ও স্বামী অরুণ চাকমা দুজনের গ্রামের বাড়ি খাঘড়াছড়ির দিঘিনালায়। দীপা অষ্টম শ্রেণি ও অরুণ চামকা ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পরিবারের অভাবের কারণে আর এগোতে পারেননি। ২০০৩ সালে অভাব মেটাতে তারা আলাদাভাবে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। কাজের মাধ্যমে দুজনের পরিচয় হয়। ২০১১ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। এই দম্পতির ঘর আলো করে আসে মেয়ে নিদি।

বিয়ের ছয় বছর পর ২০১৫ সালে কাজ ছেড়ে দেন তারা। জমানো মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন নিদি মণি স্টোর। প্রথমে কিছু সমস্যা থাকলেও কাটিয়ে উঠেছেন বেশ ভালোভাবেই।

চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসা প্রসঙ্গে দীপা রানী বলেন, বাসায় শিশুসন্তান রেখে চাকরি করা খুবই কঠিন। একদিকে কাজ, অন্যদিকে ভাবনা।

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাছাড়া চাকরি মানে তো সময়মতো অফিসে যাওয়া। অনেক সময় খুব প্রয়োজনেও ছুটি পাওয়া যেত না। ব্যবসা ছোট হলেও একটা স্বাধীনতা আছে। এছাড়া পরিশ্রম করলে সফল হওয়া যায়। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজন সময় ভাগ করে দোকান পরিচালনা করি। কখনও আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার সে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবেই চলে আসছে এই দোকানটি।

অরুণ চাকমা বলেন, চাকরি করার সময় বাড়তি আয়ের জন্য খাগড়াছড়ি থেকে শুঁটকি মাছ ও বিভিন্ন পাহাড়ি সবজি এনে আশুলিয়ায় বিক্রি করতাম। বাড়ি ফেরার সময় এসব পণ্য নিয়ে আসতাম। চাহিদাও ভালো ছিল। লাভ হতো ভালো। এখান থেকেই মূলত ব্যবসায় আসার উৎসাহ ও সাহস পাই। তারপর শিশুসন্তান বাসায় রেখে চাকরি করা ছিল প্রায় অসম্ভব।

আয়-ব্যয়ের বিষয়ে বলেন, দুজনে চাকরি করে যা বেতন-ভাতা পেতাম, তা দিয়ে বাসাভাড়া ও পরিবারের খরচ মিটিয়ে হাতে কিছু থাকত না। স্বল্প পুঁজির জন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি। এখন দোকানের আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। পরিবারের খরচ মিটিয়ে কিছু সঞ্চয় করতে পারছি এখন।

ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে তেমন কোনো সমস্যায় পড়েন না তারা। তবে আশুলিয়ায় বসবাসকারী প্রায় মানুষই কারখানা শ্রমিক। ফলে অন্য এলাকার তুলনায় মালামাল বাকিতে যায় বেশি। কখনও কখনও সেই বাকির টাকা পেতে সময় লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাকি টাকা ফেরতও পাওয়া যায় না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা অনেকটা দুর্ভাবনা নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে সাফল্যের মুখ দেখছি। আগামীতে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। আরও নতুন পণ্য ও বড় দোকান গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

সাভার

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০