নিজস্ব প্রতিবেদক: জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। আর বড় ধরনের কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এ নিয়ে স্থানীয়রা কয়েক ধাপে অভিযোগ করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়া অঞ্চলে নৌঘাট এলাকা যমুনা নদী থেকে বালুদস্যুচক্র দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্যনির্মিত যমুনা তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আবারও হুমকির মুখে পড়বে নদীপাড়ের হাজার হাজার পরিবার। বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা টাকার লোভে বালু উত্তোলন বন্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো বালুদস্যুদের উৎসাহ দিচ্ছে। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করা হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য বা প্রশাসনের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। যে কারণে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই।
এ-বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উলিয়ার বাসিন্ধা আবদুল বারেক (ছদ্মনাম) জানান, সরকারদলীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে এসব অবৈধ কাজ বন্ধ হচ্ছে না। এমপি চাইলে একদিনেই সবকিছু বন্ধ করতে পারেন। মাঝে মাঝে বালু উত্তোলন এলাকাগুলোতে পুলিশ পরিদর্শনে গেলেও বালুদস্যুদের ধরছে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই সবার সঙ্গে সমঝোতা করেই ব্যবসা করছে অসাধু চক্র।
জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এখন আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে না। প্রশাসনসহ এলাকার সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে অবৈধভাবে কেউ যেন বালু উত্তোলন করতে না পারে।’
জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আতিক, রুহুল আমিন, কোরবার আলী ও দুলাল মেম্বারসহ কয়েকটি বালুদস্যুচক্র বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনার তলদেশে জেগে ওঠা বালু সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চার বছর ধরে উত্তোলন করে আসছে। ফলে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে যমুনার তীর সংরক্ষণ, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করলেও পরক্ষণেই আবার শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন করেও বালি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
বালু উত্তোলনকারী রুহুল আমিন ও কোরবার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে ইসলামপুরে যমুনার গুঠাইল হার্ডপয়েন্টেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে গুঠাইল বাজার পুনরায় হুমকির মুখে পড়বে বলে জানায় এলাকাবাসী।
জানা যায়, চিনাডুলী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য নিদানু ও তার ছেলে আজাদসহ একটি বালুদস্যুচক্র সম্প্রতি যমুনার পানি কমে যাওয়ায় গুঠাইল হার্ডপয়েন্টের পাশ থেকে ড্রেজারে অবৈধভাবে যমুনা নদীতে থেকে বালু উত্তোলন করছে।
জানা গেছে, চক্রগুলো সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী গুঠাইল বাজার ও সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ বিষয়ে রহস্যজনক কারণে স্থানীয় ভূমি অফিসসহ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।
এছাড়াও ইসলামপুর পূর্বাঞ্চলের ফকিরপাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পাইলিংঘাটের কাছেও স্থানীয় একটি চক্র প্রতিবছরেরর মতো এবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।
জানা গেছে, সোহরাব হোসেন ও সুজন পালসহ স্থানীয় একটি দস্যুচক্র বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে জেগে ওঠা বালুমহাল থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এদের হাত অনেক লম্বা এবং চক্রটি অনেক শক্তিশালী।
বালুদস্যুচক্র সোহরাব হোসেন ও সুজন পালের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ‘বালি বিক্রি করছি মাত্র এক মাস ধরে। প্রতি ট্রাক্টর ১২০০ টাকা করে বিক্রি করছি। শুধু শুধু আমাদের নিয়ে লেখালেখি করে লাভ হবে না। টাকা তো আমরা একা খাই না, সবাইকে দিয়ে খাই।’