পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে সবজির বাজারও চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীতে এক দিনের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। গত সপ্তাহে বেশকিছু সবজির কেজি ৩০ টাকায় নেমে এলেও গতকাল ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ও খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পর মাঝে কিছুটা কমেছিল, কিন্তু গতকাল পেঁয়াজের দাম ফের বেড়ে গেছে। মূলত আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও বেশ বেড়েছে।

শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে, যা এক দিন আগে বৃহস্পতিবারও বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।

অন্যদিকে আমাদানি করা পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মো. জমসেদ আলী বলেন, হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এক দিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬৫ টাকা কেজি দরে। গতকাল আড়ত থেকেই মাল আনতে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে ৭৫ টাকায় চলে এসেছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাবে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। তবে বাজারে দেশি বা আমদানি কোনো ধরনের পেঁয়াজেরই কমতি নেই।

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম কমার কথা, কারণ কিছুদিন পরই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম না কমে বরং বেড়ে গেছে।

এদিকে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও লাউ এখন বাজারে ভরপুর। সঙ্গে ঝিঙা, পটোল, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বেগুন, শালগম, পাকা ও কাঁচা টমেটোÑসবকিছুর সরবরাহই রয়েছে পর্যাপ্ত। এর পরও প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে পাকা টমেটো। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। সে হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে কাঁচা টমেটো গত সপ্তাহের মতোই ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল তা ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। বেগুনের দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর পটোল গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় নেমে এলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে মুলা আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাল গম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর ৩০ টাকায় নেমে আসা ধুন্দলের কেজি আবার বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স ও লাউ। গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ঝিঙা-চিচিঙ্গা দাম বেড়ে হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। আর ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। আর ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিটি লাউয়ের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

তবে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে করলা। এ সবজিটির কেজি ৪০-৪৫ টাকা। আর ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি আজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল আকন্দ বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে গাজরের কেজি বিক্রি করেছি ৮০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। পটোলের দাম আবার ৫০ টাকায় চলে এসেছে।

এ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে এখন সব ধরনের সবজি ভরপুর। আড়তে কোনো সবজির অভাব নেই। কিন্তু এরপরও সেখানে দাম চড়া। আর বেশি দামে কিনে আনার কারণে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার হিসাবমতে, এখন কোনো সবজির দাম ৩০ টাকারও বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাজারে বর্তমানে কোনো সবজিই ৪০ টাকার নিচে পাবেন না।

সবজির দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে শাকের বাজার। লালশাক ও অন্যান্য শাক আগের সপ্তাহের মতোই আঁটিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, মুলাশাক পাঁচ টাকা, পালংশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া স্থিতিশীল রয়েছে মুরগির মাংসের বাজারও। সাদা ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতোই ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০