নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার পর পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
যেসব ভুল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সেগুলো ছাড়াও নতুন শিক্ষাবর্ষের সব বই পরিমার্জনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ইতোমধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের সব ভুল-ত্রুটি ঠিক করে সংশোধনী শিট দেওয়া হবে।’ এনসিটিবির সদস্য (অর্থ) অধ্যাপক কাজী আবুল কালামকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের এ পর্যালোচনা কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদন পেতে আরও সময় লাগতে পারে জানিয়ে অধ্যাপক নারায়ণ বলেন, ‘ভুলগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে হয়। কোথায় কীভাবে ত্রুটি হয়েছে পুরো বইগুলো দেখা হবে। কমিটি বলেছে, আরেকটু সময় লাগবে। যারা বই রচনা করেছেন, পাণ্ডুলিপি দেখেছেন।’
প্রতিবছরই নতুন বই প্রকাশের পর পরিমার্জন করা হয় জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন বই প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এত কাজের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়, সবার সাহায্য নিয়ে তা সংশোধন করব। ভুল কোন পর্যায় থেকে এসেছে, সেটা বের করা হবে।
বছরের প্রথম দিন চার কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে সরকার।
নতুন বই বিতরণের পরদিন গত ২ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বইগুলো দেওয়ার কথা জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা বইগুলো দেখছেন, এটা ধারাবাহিক পরিমার্জন। আমরা বিষয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলব। কী ধরনের ভুল, সেগুলো দেখা হবে।’
২০১২ সালে তৈরি করা নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ২০১৩ সালের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা। সে সময়ও ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছিল জানিয়ে অধ্যাপক নারায়ণ বলেন, ‘এখনও ওই কারিকুলামই আছে। তবে কোনো গল্প পরিবর্তন, ভুল থাকলে সেগুলো পরিবর্তন অর্থাৎ পরিমার্জন করা হয়েছে। কোনো একটা কবিতা দেওয়া হয়েছে কিন্তু দেখা গেল ওই কবিতাটি ওই বাচ্চার জন্য কঠিন হয়ে গেছে তখন আমরা ওরকম একটা কবিতা রিপ্লেস করে দিই।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারও জানিয়েছেন, পাঠ্যবইয়ের ভুল দ্রুত সংশোধন করতে এনসিটিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব কর্মকর্তার অবহেলায় পাঠ্যপুস্তকে ভুল হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন মন্ত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন শেখ পাঠ্যবই প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘শিশুরা এখন থেকেই যদি ভুল শেখে তাহলে আজীবন তা তাদের মধ্যে থেকে যাবে। সবারই এক ধরনের বানানরীতি অনুসরণ করা উচিত।’
পাঠ্যপুস্তকে ভুল থাকার জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, ‘শুধু সংশোধনী দিলেই হবে না। আমি মনে করি শিশুদের বইগুলো নতুন করে মুদ্রণ করে দেওয়া উচিত।’
Add Comment