প্রথম ই-মেইল ও রে টমলিনসন

রতন কুমার দাস:‘পরীক্ষামূলক বার্তাটির কথা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম! খুব সম্ভবত ওই ই-মেইলে লিখেছিলাম ছডঊজঞণওঙচ কিংবা এ জাতীয় কিছু বার্তা’এ হলো রে টমলিনসনের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের এ কম্পিউটার প্রকৌশলীই প্রথম ই-মেইল করেছিলেন। অনেকের মতে, তিনি ছিলেন একজন সাধারণ প্রোগ্রামার।

ই-মেইলটি পাঠানো হয় ১৯৭১ সালে। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই জানেন, ওই সময়ের আগেও যোগাযোগের এ মাধ্যমটি ছিল। কিন্তু তখনকার দিনে কেবল একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা সবাইকে

ই-মেইল পাঠানো যেত। টমলিনসন অবশ্য প্রথম মেইলটি নিজেকেই পাঠিয়েছিলেন ওই বছরের শেষদিকে। বার্তা পাঠানোর জন্য ‘Ñ’ ব্যবহার করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে আরপানেট কম্পিউটার ব্যবহার করে তিনি এটি পাঠান।

‘Ñ’ চিহ্নের জন্যও বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি।

রে টমলিনসন কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বোল্ট বেরানেক অ্যান্ড নিউম্যানে। ১৯৭১ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে টেনেক্স নামে একটি প্রোগ্রামার দলে কাজ করতেন তিনি। টাইম শেয়ারিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করত দলটি। এর নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল প্রটোকলে (এনপিসি) কাজ শুরু করেন রে। ‘এসএনডিএমএসজি’ নামে দেশটির স্থানীয় আন্তমেইল দেওয়া-নেওয়া ব্যবস্থায় উন্নয়নের জন্য যুক্ত হন তিনি। এখানে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কম্পোজ, অ্যাড্রেস, বার্তা প্রভৃতি অন্য মেইলে পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল।

সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন টমলিনসন। তাই প্রযুক্তি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতেন তিনি। ওই প্রকল্পে নিজস্ব ধারণা যুক্ত করেন। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, তখনকার দিনে মেইলে ফাইল যুক্ত করা যেত। কিন্তু সে ফাইল দেখা বা সম্পাদনা করা যেত না। এ সমস্যা সমাধানে কাজ করেন তিনি। পাঠক আগেই জেনেছেন, নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের বাইরে মেইল করা যেত না। এটা নিয়েও গবেষণা চালিয়ে যান এবং নির্দিষ্ট ঠিকানায় মেইল করার বিষয়টি আবিষ্কার করেন। তবে এখানেও সমস্যার অন্ত ছিল না। যেমন, এর মধ্য দিয়ে শুধু বার্তা পাঠানো কিংবা নেওয়া যেত। ফাইলও যুক্ত করা যেত না। বিষয়টি সুরাহার জন্য সিপিনেটের কোড এসএনডিএমএসজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার শুরু করেন। কোডটি স্থানীয় মেইলগুলোকে নেটওয়ার্ক মেইল থেকে আলাদা করে ফেলে। ফলে মেইলের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় স্থানীয় মেইল দেওয়া কিংবা নেওয়ায় বাধা কেটে যায়।

পাদটীকা

রে টমলিনসনের পুরো নাম রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন। নিউইয়র্কের আমস্টারডামে ১৯৪১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ালেখা করেন। ইন্টার্নি করেন আইবিএমে। ১৯৬৩ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬৫ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এসএম করেন।

১৯৬৭ সালে বোল্ট বেরানেক অ্যান্ড নিউম্যানে (বর্তমানে রেথিওন বিবিএন টেকনোলজিস) কাজ শুরু করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে টেনেক্স অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়নে সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালে তিনিই প্রথম নেটওয়ার্ক ই-মেইল চালু করেন। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে নেটওয়ার্ক

ই-মেইলের ধারণা প্রসিদ্ধ হয় তার বদৌলতেই। তার দেখানো userÑhost-B -ই প্রথম মানসম্মত ই-মেইল অ্যাড্রেস, যা আজও টিকে আছে। মানব ইতিহাসে যোগাযোগের ধারণা বদলে দিয়েছেন টমলিনসন। ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসা, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়াদি সহজ করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন ই-মেইল আদান-প্রদান হয়। বিশ্বে প্রায় দেড় বিলিয়ন ই-মেইল ব্যবহারকারী রয়েছেন।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। ২০০০ সালে আমেরিকান কম্পিউটার মিউজিয়াম থেকে জর্জ আর. স্টিবিটজ কম্পিউটার পাইওনিয়ার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। ২০০১ সালে ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব ডিজিটাল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে ওয়েবি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ডিসকভার ম্যাগাজিন ২০০২ সালে তাকে সেরা ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারনেট অ্যাওয়ার্ড নিজের করে নেন ২০০৪ সালে। দ্য প্রিন্স অব অস্টুরিয়াস অ্যাওয়ার্ড লরিয়েট ফর টেকনিক্যাল অ্যান্ড সায়েন্টিফিক রিসার্চ উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ঘটনাটি ২০০৯ সালের। এডুয়ার্ড রেইন কালটারপ্রেইস কালচারাল অ্যাওয়ার্ড পান ২০১১ সালে। নানা পুরস্কারে পূর্ণ টমলিনসনের ঝুলি। জীবিতকালেই কাজ ও প্রতিভার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এমআইটির দেড়শ সেরা উদ্ভাবক ও প্রযুক্তি চিন্তকের তালিকায় স্থান পাওয়া বিশেষ গৌরবের। শুধু কি তাই, ওই তালিকায় তার অবস্থান চতুর্থ।

রে টমলিনসনকে আধুনিক ই-মেইলের জনক বলা হয়। কেনইবা নয়, যোগাযোগব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে তার অবদান অপরিসীম। তিনি পরলোকগমন করেন ২০১৬ সালের ৫ মার্চ।

 

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, কম্পিউটিং হিস্ট্রি ও ইন্টারনেট হল অব ফেম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০