নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক খাতের রফতানি বাড়াতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ (বিডব্লিউএইচ) ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ব্যবস্থা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এখন দেশের রফতানিকে বৈচিত্র্যকরণ ও প্রতিযোগিতাক্ষম করার প্রয়োজন। এজন্য এ দুটি সুবিধা তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য রফতানি খাতের জন্য সম্প্রসারিত করা জরুরি। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অটোমেশন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার পিআরআই’র বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় বলা হয় বাংলাদেশের রফতানির ৮০ শতাংশের বেশি হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু এর বাইরেও এক হাজার ৪০০ পণ্য ২০১৭ সালে রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে সহস্রাধিক পণ্যের রফতানি আয় ১০ লাখ ডলারের নিচে। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক, ব্যাটারি, কেবল্, সিরামিকস, ম্যালামাইন, অ্যালুমিনিয়াম, কেমিক্যাল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য। দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রফতানির সঙ্গে জড়িত। এগুলোর মাধ্যমে রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রফতানিতে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতের অবদান বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ওইসব খাতকে পোশাক খাতের মতো সমান সুযোগ দিতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে ‘শতভাগ’ রফতানিসংশ্লিষ্ট নয় বলে ওইসব খাতের উদ্যোক্তারা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে করে তারা শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। অবশ্য এনবিআর কর্মকর্তারা সভায় ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, বন্ড সুবিধা সব খাতই পেতে পারে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পরে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ অপর এক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অন্যান্যের মধ্যে পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান, এনবিআর সদস্য এএফএম শাহরিয়ার মোল্লাসহ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআর বন্ড ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। একনেকে নতুন একটি প্রকল্প পাস হয়েছে, যার আওতায় বন্ড ব্যবস্থাপনার অটোমেশন উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বন্ড কমিশনারেটে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য এনবিআর কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন সময় বন্ড কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারিশ আসে। তাই কারও জন্য সুপারিশ এলে তাকে সবার আগে অযোগ্য বিবেচনা করার নীতিতে কাজ করা হয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রফতানিমুখী খাতের সুবিধার লক্ষ্যে বিডব্লিউএইচ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ নিয়ে কিছু দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। অনেকে এ সুবিধা নিয়ে কাঁচামাল আমদানি করে সেটাকে স্থানীয় বাজারের শিল্পে সম্পৃক্ত করে থাকতে পারে। এখন এটি মোকাবিলার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি কিছু আর্থিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, তাও ভাবতে হবে।
ড. আহসান মনসুর বলেন, রফতানির বৈচিত্র্যকরণে আমরা মনে করি বন্ড সুবিধাকে অন্যান্য খাতের প্রতি প্রসারিত করা প্রয়োজন। এটি খুবই কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। এ মুহূর্তে এনবিআরে চার হাজার বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। অন্যান্য খাতের প্রতি বন্ড সুবিধা উš§ুক্ত করলে আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ বিপুলসংখ্যক বন্ড লাইসেন্সের লেনদেন ব্যবস্থাপনার জন্য অটোমেশন ও ডিজিটাল ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। এজন্য এনবিআরকে অবশ্যই অটোমেশনের দিকে যেতে হবে।
এনবিআর সদস্য এএফএম শাহরিয়ার মোল্লা বলেন, বর্তমানে চার হাজার ৯০৯টি সক্রিয় লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৪৭টি হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের। বাকিগুলো অন্যান্য খাতের লোকদের দেওয়া হয়েছে। বন্ড সুবিধা পেতে আইনিভাবে অন্য খাতের উদ্যোক্তার কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা ড. মাসরুর রিয়াজের উপস্থাপনায় বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক সফল অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেগুলো কার্যকরভাবে অবলম্বন করা যেতে পারে। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের বন্ড সুবিধা যত সহজে দেওয়া হয়, চামড়াশিল্পে তা দেওয়া হয় না। এ খাতে নানা রকম জটিলতার কথা জানিয়ে থাকেন উদ্যোক্তারা। সুবিধাগুলোকে সুষমভাবে না দেওয়া গেলে রফতানির বৈচিত্র্যকরণ সম্ভব নয় বলে মত দেন তারা।