তিন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত সপ্তাহজুড়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তিন কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউনাইটেড পাওয়ার: ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটি ৯০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ওই সময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪১ টাকা ২২ পয়সা। এটি আগের বছরের ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত সমাপ্ত ১৮ মাসে ছিল ১৫ টাকা ৫৭ পয়সা ও ৩৪ টাকা ২২ পয়সা। ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ সকাল সাড়ে ১০টায় গল্ফ গার্ডেন, আর্মি গল্ফ ক্লাব, বিমানবন্দর সড়ক, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৮ জানুয়ারি ২০১৮।

চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৯৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল দুই টাকা ৮৩ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ইপিএস বেড়েছে ১২ পয়সা। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনএভি হয়েছে ৪৪ টাকা ১৭ পয়সা, যা একই বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৪১ টাকা ২২ পয়সা।

সিএমসি কামাল টেক্সটাইল: আলোচ্য সময় কোম্পানিটি ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ওই সময় ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৯২ পয়সা এবং এনএভি হয়েছে ১৯ টাকা দুই পয়সা। এটি আগের বছর ছিল যথাক্রমে এক টাকা ২১ পয়সা ও ১৭ টাকা ১০ পয়সা। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এজিএমের সময় ও স্থান পরে জানিয়ে দেবে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ): ৩০ জুন ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত শেষ হওয়া অর্ধবছরের মুনাফার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৭৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটি ইপিএস করেছে ২৫ টাকা ৬৫ পয়সা ও এনএভি ৩৮ টাকা ১৮ পয়সা। এটি আগের বছর একই সময় ছিল যথাক্রমে ২৫ টাকা পাঁচ পয়সা ও ৫৩ টাকা ৫৩ পয়সা। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০ ডিসেম্বর।

লভ্যাংশ ঘোষণার সঙ্গে শেয়ারদর বৃদ্ধির যোগসূত্র রয়েছে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির কিছু সাধারণ কারণ

প্রত্যেক দেশের পুঁজিবাজারের একটা নিজস্ব ধরন রয়েছে। আমাদের দেশের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন যেহেতু কম, তাই এ বাজারে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি বা পতনের পেছনে যেমন থাকে কিছু মৌলিকতা; আবার থাকে গুজবসহ অন্যান্য বিষয়াবলী। নিন্মে এর কিছু কারণ তুলে ধরা হলো :

অর্থবছর বা হিসাববছর শেষে যখন কোম্পানি মুনাফা করে ও লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তখন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াটাই যৌক্তিক।

যদি কোনো কোম্পানি তাদের পণ্য বিদেশে রফতানির সুযোগ পায়, সেক্ষেত্রে দাম বাড়তে পারে।

যদি অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে যৌথ ব্যবসার চুক্তি হয়, সেক্ষেত্রেও দাম বাড়তে পারে।

যদি কোম্পানির নতুন কোনো পণ্য বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়, এতেও দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে নতুন শাখা খোলা, যেখান থেকে অনেক মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে এমন খবরের কারণেও দাম বাড়ে।

যদি কোম্পানিটি বিদেশের কোনো শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয় বা বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী যদি ওই কোম্পানি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করে।

অন্য কোনো কোম্পানির সুখবরের জন্য যখন শেয়ারবাজার বাড়ে, তখন

হুজুগে অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারও বাড়তে পারে।

যখন আপনি এসব কারণ বুঝতে পারবেন, তখন শেয়ার ব্যবসার বাকি হিসাবগুলোও আপনার কাছে অনেক সহজ হয়ে উঠবে।

এসব কারণ, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারগুলোর মূল্য যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

শেয়ারের মূল্য নামার কিছু কারণ

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সঠিক তথ্য বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে সব সময় ওঠানামা করে না। কোনো যুক্তিযুক্ত তথ্য বা সংবাদের ওপর ভিত্তি করেই কোনো শেয়ারের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি সব সময় ঘটে না। ব্যাপারটা একটু লক্ষ্য করলে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন। আমাদের শেয়ারবাজারের চরিত্র পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের শেয়ারবাজারের মতো নয়। মাঝে মাঝে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বাজার ইনডেক্স উঠছে; আবার একইভাবে নামছে। এ বিষয়টা যখন আপনি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইবেন, তখন তারা পূর্বের ঠিক করা কিছু গতানুগতিক উত্তর শুনিয়ে দেবে এবং আপনি সে উত্তর শুনে বাধ্য হয়ে ফিরে আসবেন।

অথচ বহির্বিশ্বের কোনো বিশেষজ্ঞই আমাদের দেশের শেয়ারবাজারের এসব জটিলতার সমাধান দিতে পারবেন না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বুঝতেই পারছেন না কী ধরনের উত্তর আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেতে পারি। আসুন, আরেকটু পরিষ্কার করে বলি। যেমন ‘জেড’ ক্যাটাগরির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম হয়তো অনেক বেশি। কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে বা নিয়েছে? উত্তর এ রকম: আমরা (কর্তৃপক্ষ) ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে সময় ৯ দিন করেছি, যাতে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কর্তৃপক্ষ কেন বিনিয়োগকারীদের ওপর সব সময় ধায় চাপাবে? তাদের কাজ হচ্ছে, কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া এবং কেন ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো এজিএম করছে, সেদিকে নজর দেওয়া। পৃথিবীতে প্রায় সব জায়গাতেই এমনটা হচ্ছে যে, কিছু কিছু কোম্পানি মুনাফা ঘোষণা করতে পারছে না। তার মানে এই নয় যে, শেয়ারহোল্ডারদের অন্ধকারে রাখব।  সাধারণত নি¤œলিখিত কারণগুলোর প্রভাবে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক সূচকের পতন ঘটে :

ক) বার্ষিক সাধারণ সভা না করা হলে বা করলেও তেমন কোনো মুনাফা ঘোষণা না করা।

খ) কোনো অনিয়মের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি থেকে নোটিস পাওয়া এসব কারণে শেয়ারের দাম কমতে পারে।

গ) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যখন শেয়ারবাজার পড়ে যায়, তখন শেয়ারের দাম কমতে পারে।

ঘ) অন্য কোনো কোম্পানির কারণে যখন শেয়ারবাজারের সূচক নামতে থাকে, তখন হয়তো সামগ্রিক বাজারের প্রভাবে ওই কোম্পানির শেয়ার মূল্যেরও পতন ঘটে। তাই এ বিষয়গুলো মাথায় রাখা খুবই জরুরি।

ঙ) গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সরকার বদল হয়ে থাকে। অনেক সময় সরকার বদলের কারণে শেয়ারবাজারের সূচকের পতন ঘটে।

চ) কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির জালিয়াতি ধরা পড়ার কারণে শেয়ার সূচকের পতন দেখা দিতে পারে।

উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রভাবে পুঁজিবাজারের সূচকের পতন ঘটতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০