সোহরাওয়ার্দীতে মুক্ত উপাসনায় পোপ ফ্রান্সিস

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু (পোপ) ফ্রান্সিসের নেতৃত্বে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অংশ নিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এ উপাসনা অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আড়াই ঘণ্টার এ মুক্ত উপাসনায় বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করেন পোপ। বক্তৃতা দেন যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশে। গত ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো পোপের এটাই প্রথম সফর। সর্বশেষ সফর করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল, ১৯৮৬ সালে।

বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারেও একই ধরনের প্রার্থনা সভায় নেতৃত্ব দেন পোপ। সেখানে তিনি সবাইকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানান। পোপের আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সাড়ে ৯টায় শুরু হলেও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন ভোর ৬টা থেকে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরাও প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে আসেন।

সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পোপ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয় উপাসনা অনুষ্ঠান। ঈশ্বর বন্দনায় ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান একসাথে দলে দলে হয়ে এক প্রাণ..,’ প্রার্থনা সংগীতে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। উপাসনা সংগীতের মধ্যেই সকাল ১০টায় মঞ্চে ওঠেন পোপ ফ্রান্সিস। বিভিন্ন খ্রিস্টীয় আচারে চলতে থাকে অনুষ্ঠান। ষোলো জন ‘ঈশ্বরসেবককে’ যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করার আগে উপসনায় আগতদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পোপ। তার স্প্যানিশ ভাষার বক্তব্য বাংলায় তরজমা করে শোনানো হয়।

পোপ বলেন, ‘প্রিয়জনেরা, আজকের এই শুভদিনে যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই এসেছেন, আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আপনারা অনেকে অনেক দূর থেকে এসেছেন, অনেকে দুই দিনের যাত্রাপথ অতিক্রম করে এখানে এসেছেন, আপনাদের এ উদারতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এটা প্রকাশ করে মঙ্গলের জন্য আপনাদের সবার অন্তরে অনেক ভালোবাসা রয়েছে। এটা প্রকাশ করে যিশুখ্রিস্টের জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসা রয়েছে।’ খ্রিস্টীয় চার্চের এ প্রধান পুরোহিত বাংলাদেশে যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, এভাবে সামনের পথে এগিয়ে যান, পর্বতের ওপর যিশুর অস্টকল্যাণ বাণীর আলোকে, সেই প্রেরণা নিয়ে।

উল্লেখ্য, তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বিকালে মিয়ানমার থেকে ঢাকা পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোপ। পরে ধানমণ্ডিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি। সেখান থেকে বঙ্গভবনে যান পোপ, সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের পর দুপুরে ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল বিকালে তিনি কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সভায় শান্তি কামনায় আন্তধর্মীয় ও সম্প্র্রদায়গত ঐক্য বিষয় আলোচনা হয়।

সফরের শেষ দিন আজ শনিবার সকালে তেজগঁাঁওয়ে মাদার তেরেসা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগঁাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। দুপুরের পর ঢাকায় নটর ডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন যিশুর প্রধান অনুসারী। আজ বিকাল ৫টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাকে বিদায় জানাবেন বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকানের প্রধান। পোপ ফ্রান্সিসের জš§ ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেসে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০