মেহেদী হাসান: যেসব অঞ্চলে ব্যাংকের কোনো শাখা নেই সেসব অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু হওয়ায় ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২টি হিসাব খোলা হয়েছে, যেখানে আমানত হিসেবে জমা পড়েছে ৯২২ কোটি আট লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের শাখা খুলতে নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং করতে বা এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া সহজ। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। সংশ্লিষ্ট এজেন্টই সব খরচ বহন করে। ফলে এতে একদিকে কোনো খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যাও বাড়ছে কোনো খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুললে পাচ্ছেন বিভিন্ন সার্ভিস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২টি হিসাব খোলা হয়েছে, যা গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৬টি। সে হিসাবে ৯ মাসের ব্যবধানে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে চার লাখ ৯৩ হাজার ৭০৬টি। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৬৫টি। আর এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৫টি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা মোট হিসাবগুলোর অর্ধেকের বেশি খোলা হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এই ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের খোলা হিসাব সংখ্যা ছয় লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়া ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংক দুটির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা হিসাব সংখ্যা যথাক্রমে দুই লাখ ৩৭ হাজার ২৭৮টি ও ৬০ হাজার ৫৪২টি।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি তফসিলি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলো হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
গ্রামীণ জীবনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রভাব বাড়ছে দ্রুত। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত সবচেয়ে বেশি এসেছে গ্রাম থেকে, যা ৭৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। শহরের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবগুলোতে আমানত আছে ৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আমানত সংগ্রহের দিক দিয়েও প্রথম অবস্থানে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো শুধু হিসাব খোলা বা পরিচালনা করা ও রেমিট্যান্স বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, ঋণ বিতরণের মাধ্যমে আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ব্যাপারেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে এগিয়ে থাকা তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বমোট ৭৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেটগুলোতে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। তবে এজেন্টরা কোনো চেকবই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বিদেশসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারে না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। এজেন্টরা মোট লেনদেনের ওপর কমিশন পেয়ে থাকে।