নিজস্ব প্রতিবেদক: পুনর্গঠিত ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের দুই বছর পর নতুন করে আবার সেই সুবিধা দিতে চাইলেও তা নাকোচ করেছে পরিচালনা পর্ষদ। ফলে কোনো সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠন করে নিয়ে নিয়মিত কিস্তি না দিলে তার বিরুদ্ধে দেউলিয়া আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ হয়েছে সভায়। পরে পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে এটি নাকোচ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সুদ কমানো, পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, ডাউনপেমেন্টের শর্ত শিথিলসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে ১১টি শিল্পগোষ্ঠীর ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ না করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন করে পুনঃতফসিলের সুযোগ চায়। এরপর শর্ত শিথিলের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজনৈতিক অস্থিরতার ওই সময়ে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পুনর্গঠিত ঋণে নতুন করে পুনঃতফসিলের সুযোগ দিতে নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নীতিমালা সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন দরকার। এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল।
এর আগে গত নভেম্বর মাসেও একই প্রস্তাব পর্ষদে নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে বিষয়টি আরও বিশ্লেষণ করে উত্থাপন করতে বলা হয়েছিল।
ব্যাংক খাতে পাঁচশ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নীতিমালায় বলা হয়, পুনর্গঠিত এসব ঋণ আর পুনঃতফসিল করা যাবে না। সুবিধা নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান সময়মতো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সব ধরনের সুবিধা বাতিল হবে। এ ছাড়া টানা দুটি কিস্তি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের সমুদয় অর্থ আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দেউলিয়া আইনে মামলা করতে পারবে। আর ব্যাংক থেকে পুনর্গঠন প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর আগে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও নগদ অর্থের প্রবাহের বিষয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরির চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি ফার্ম থেকে প্রত্যয়ন নিতে বলা হয়েছিল।
নীতিমালার আলোকে পুনর্গঠিত ঋণ পরিশোধে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড পায় ১১টি প্রতিষ্ঠান। গ্রেস পিরিয়ড শেষ হতেই চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশেষ সুবিধা চায় তিনটি গ্রুপ। এসএ, রতনপুর ও এমআর গ্রুপ দুই হাজার ৩১৫ কোটি টাকার পুনঃতফসিল চেয়ে যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি আবেদন করে।
আবেদনে বলা হয়, পুনর্গঠিত মেয়াদি ঋণ পরিশোধে ১২ বছরের স্থানে তাদের ২০ বছর সময় দিতে হবে। ঋণের সুদহার হতে হবে শূন্য শতাংশ। অর্থাৎ নতুন করে আর কোনো সুদ আরোপ করা যাবে না। আর বিদ্যমান গ্রেস পিরিয়ড তথা ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ এক বছরের পরিবর্তে আরও বাস্তবভিত্তিক করতে হবে। ব্যাংকগুলো নতুন করে যেন তাদের চলতি মূলধন ঋণ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ওই সময় তা নাকচ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বিভিন্ন পক্ষের চাপে নতুন করে এসব ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিতে নীতিমালার শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।