নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগের ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু নিজেকে ‘দোষী’ বলে মনে করেন না। গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘নিজেকে দোষী মনে করি না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণের পর সম্প্রতি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। সেই অনুযায়ী বাচ্চু গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হন। বেলা পৌনে ১১টায় শুরু হয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর আগে সাংবাদিকরা অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় পার্টির সাবেক এ এমপি শুধু বলেন, ‘নিজেকে দোষী মনে করি না।’ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো নিয়ে দুদক তদন্তের মধ্যে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, সেগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আমি দুদককে আরও সহযোগিতা করব। যেটুকু আমার পক্ষে সম্ভব, তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতির যে অভিযোগ এসেছে, তাতে তখনকার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের দায় কতটা এমন প্রশ্নে বাচ্চু বলেন, ‘এখনও অভিযোগের তদন্ত চলছে। এখনও কিছু প্রমাণ হয়নি। কাজেই এটা বলা এখন মুশকিল। তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়।’
আলোচিত ওই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ গত ২২ নভেম্বর থেকে চলছে। এর আগে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের সাবেক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, আনিস আহমদ, কামরুন নাহার আহমেদ, অধ্যাপক কাজী আকতার হোসাইন, সাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, একেএম কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, শ্যাম সুন্দর শিকদার ও একেএম রেজাউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই-বাছাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তবে আসামির তালিকায় বাচ্চু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় ওই তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। গত ২০১৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার তথ্য তুলে ধরেন। এরপর চলতি বছরের আগস্টে অন্য এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করেন। এর জের ধরেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।