নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির বুনন পদ্ধতিকে ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় যুক্ত করেছে ইউনেস্কো। গতকাল বুধবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পরে এদিন বিকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে খবরটি জানান বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সচিব মঞ্জুর হোসেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ৩২ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউনেস্কোর দ্বাদশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের শীতলপাটি বুননের ঐতিহ্যগত হস্তশিল্পকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণে গঠিত আন্তর্জাতিক পর্ষদ বাংলাদেশ সরকারের শীতলপাটিবিষয়ক প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।
তিনি জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এ প্রস্তাবটি প্রণয়ন করেছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইউনেস্কোর কাছে তা দাখিল করেছিল। স্বীকৃতিদানের মূল কাজটি করে ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ।
সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল। জাতীয় জাদুঘরের সচিব শওকত নবীর নেতৃত্বে দলে আরও আছেন জাদুঘরের কিপার শিখা নূর মুন্সী ও ডেপুটি কিপার আসমা ফেরদৌসী। প্র্যাকটিশনার হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন সিলেটের দুই প্রসিদ্ধ শীতলপাটিশিল্পী গীতেশ চন্দ্র দাশ ও হরেন্দ্র কুমার দাশ।
শীতলপাটি নামের মধ্যেই রয়েছে এর গুণ। এ পাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গরমে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। শীতলতার পাশাপাশি নানা নকশা, রং ও বুননকৌশল মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত এ পাটি।
সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শ্রীনাথপুর, আতাসন, গৌরীপুর, লোহামোড়া, হ্যারিশ্যাম, কমলপুর প্রভৃতি এলাকায় শীতলপাটি তৈরি হয়। এছাড়া নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় কিছু কারিগরের দেখা মেলে। এসব শীতলপাটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমনÑসিকি, আধুলি, টাকা, নয়নতারা, আসমান তারা ইত্যাদি। তবে সিকি, আধুলি ও টাকা ব্যাপক পরিচিত।
পাটিগুলো সাধারণত সাত ফুট বাই পাঁচ ফুট হয়ে থাকে। সিকি খুবই মসৃণ হয়। কথিত আছে, সিকির ওপর দিয়ে সাপ চলাচল করতে পারে না মসৃণতার কারণে। সিকি তৈরিতে সময় লাগে চার থেকে ছয় মাস। আধুলির মসৃণতা কম হয় এবং এর বুননে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। একটি আধুলি তৈরিতে সময় লাগে তিন থেকে চার মাস। টাকা জোড়া দেওয়া শীতলপাটি দুই বা তার অধিক জোড়া থাকে টাকাতে। এগুলো অত্যন্ত মজবুত হয়। ২০ থেকে ২৫ বছরেও নতুন থাকে এ পাটিগুলো। এসব পাটির পাশাপাশি কিছু সাধারণ পাটি আছে, যা তৈরি করতে সময় লাগে এক থেকে দুই দিন। পাটির দাম নির্ভর করে সাধারণত বুননকৌশল ও নকশার ওপর। সর্বনি¤œ দুই থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে একেকটি পাটির দাম।
প্রসঙ্গত, ইউনেস্কোর প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের বাউলসংগীত। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি বুননশিল্প লাভ করে এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। গত বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা একই স্বীকৃতি লাভ করে।