নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রিজাল ব্যাংককে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে চাই। ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসির (রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন) বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলব।
গতকাল বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি আয়োজিত সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে এর আগে ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন গড়িমসি করছে। এ কারণে মামলার কথা ভাবছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এর আগে গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ও আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার বিষয়ে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। ওই মামলায় তারা বাদী হবে কি না, এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। গত মাসে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিউইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ওই কনফারেন্স কলে সুইফটের দুজন প্রতিনিধিও ছিলেন আলোচনায়। বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন এরকম একজন ওই কনফারেন্স কলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি তোলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো লিখিত প্রস্তাব পাঠালে তা বিবেচনা করে দেখা হবে বলে বৈঠকে আশ্বাস দেন ফেডের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ওই দেওয়ানি মামলাটি করা হবে নিউইয়র্কে। ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষ এ মামলায় বাদী হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফটের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা রয়টার্সকে বলেছেন, এ মামলার বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। তবে রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে। ব্যাংকটির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার জায়গা) চলে যায় বেশিরভাগ অর্থ। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়। পরে ফিলিপাইনের সিনেট শুনানির মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া এক কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বড় এই সাইবার হামলার ঘটনা এক মাস পর ফিলিপাইনের গণমাধ্যমের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকাশ পায়। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।