বায়ুদূষণে বছরে জিডিপির ১% হারাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেবল বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশ বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশ হারাচ্ছে। অদক্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে শহরগুলো ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে। দূষণের ৫২ শতাংশই হচ্ছে টেক্সটাইল খাতের কারখানাগুলোর মাধ্যমে। এক টন কাপড় উৎপাদনের জন্য ২০০ টন দূষিত পানি রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোয় ঢালা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালিসিস (সিইএ) বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষকরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দূষণ। পুকুর, খাল, নদী দূষিত হচ্ছে। আসলে এজন্য সবার সচেতনতা দরকার। আসলে বাংলাদেশ একটি প্রায়-সামন্ত্যতান্ত্রিক (সেমি-ফিউডাল) সমাজ বিদ্যমান। এখানে নির্মোহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সব সময় বলা হয়, সংসদ সদস্যদের কাজ শুধুই আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু প্রতিদিন সকালে আমার বাসার সামনে মানুষ আসে অসংখ্য প্রয়োজন-আবদার নিয়ে, সেগুলো আমাকে মেটাতে হয়। আমি তো সেগুলো এড়াতে পারি না। মন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে বলেন, আমরা প্যারিস চুক্তির আওতায় অনুদান চেয়েছিলাম, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিবেশ রক্ষায় অর্থ ঋণ চাইনি।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু পরিবেশ অধিদফতরকে দিলেই হবে না। সব বিভাগের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কাজ করা দরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি আছে। সেখানে আলোচনা হয়। কিন্তু সভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর শিল্প মন্ত্রণালয়, পানি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় সবাই পরিবেশের কথা ভুলে যান। পরিবেশ নিয়ে শুধু আমাকেই ভাবতে হয়। এতে সমস্যার সমাধান হবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ৬০-৭০ শতাংশ খাল নেই, হারিয়ে গেছে। এগুলো হয় কারণ, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত। আর প্রশাসনও তার সঙ্গে যুক্ত। এসব নিরসনের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সবাই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্তু কেউ শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেন না। এসব সমস্যা নতুন প্রজন্মকে ক্ষুব্ধ করছে।’

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি যে পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলে উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ হয়েছে। কিন্তু বড় মাপের ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে পরিবেশের ওপর। বৈশ্বিক পরিবেশবান্ধব অবস্থার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৩তম। তবে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা থেকে আমরা দেখছি, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলের পরিবেশদূষণ জিডিপির দুই দশমিক সাত শতাংশ হ্রাস করছে। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের পরিবেশকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিবেশদূষণ এড়িয়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করে উন্নয়ন করার নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’

উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে বড় ও ছোট শহরগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শুধু ঢাকা শহরে ছয় লাখ বাসিন্দা এখন বিষাক্ত লেড-দূষণে আক্রান্ত হয়ে আছে, যা নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এতে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদফতরের ডিজি রাইসুল আলম মণ্ডল, পরিবেশসংক্রান্ত বৈশ্বিক চর্চার ব্যবস্থাপক কেসেনিয়া লভস্কি প্রমুখ।

এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, পরিবেশসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের জানা আছে। তবে বুঝতে হবে যে আমাদের প্রেক্ষিত ভিন্ন। আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আমরা চাইলেও আমাদের শিল্পকে ধ্বংস করে দিতে পারি না। আমরা শিল্পায়নকে অব্যাহত রেখেই পরিবেশের পক্ষে নিয়মকানুন তৈরি করব।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০