নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন মৌসুমে আগাম আলু বাজারে আসতে শুরু করেছে। অথচ এখনও বিভিন্ন হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষিত রয়েছে। এ বছর প্রায় ১৫ লাখ টন আলু অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এতে কৃষক, আলুর ব্যাপারী ও হিমাগার মালিকদের সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। এ অবস্থার কারণে চলতি মৌসুমে আলু চাষ কমে গেছে, যা আগামী বছরে সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির (বিসিএসএ) নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এসব কথা জানিয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসএ’র সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কৃষিভিত্তিক হিমাগার শিল্প ও আলুচাষিদের বাঁচাতে হলে আলুর রফতানি বৃদ্ধির জন্য ৩০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আলুর ভোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, বিসিএসএস’র সহ-সভাপতি ড. কামরুল হোসেন চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদসহ হিমাগার মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
হিমাগার মালিকরা বলেন, দেশে বেসরকারি মালিকানাধীন ৪১৬টি হিমাগারে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টন আলু অবিক্রীত অবস্থায় রয়ে গেছে। আলুর বাজারে অস্বাভাবিক ধস নামার কারণে এখন কৃষক ও হিমাগার মালিকরা আলু বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় হিমাগার মালিকরা ব্যাংকঋণ শোধ করতে পারছেন না। ফলে আলুর কৃষক, ক্ষুদ্র আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ছে। এরই মধ্যে নতুন মৌসুমে আগাম আলু বাজারজাত শুরু হয়েছে। বিদায়ী মৌসুমের হিমায়িত আলু বাজারজাতকরণের জন্য আর তিন সপ্তাহ সময় রয়েছে। এ অবস্থায় অনেক এলাকায় কৃষকরা আলুচাষ করতে হতাশা ও অনীহা প্রকাশ করছে। কুমিল্লা অঞ্চলের এক আলুর ব্যাপারী আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া আরও তিনজন ব্যাপারী হƒদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকদের রক্ষার জন্য সরকারিভাবে ত্রাণকার্যে, ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডে, কাবিখায় চালের সঙ্গে আলু বিতরণের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আলুর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ দেওয়া হয়।
উদ্যোক্তারা জানান, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলু রফতানির প্রণোদনা ১০ শতাংশ হ্রাস করায় রফতানি কমে গিয়েছে। আমাদের জানামতে চলতি বছরে ৪৫ হাজার টন আলু রফতানি হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের আধা শতাংশেরও কম। এসব কারণে চলতি মৌসুমে অনেকে আলু চাষ করেননি। ফলে একদিকে এ বছর আলুর উদ্বৃত্ত থাকার কারণে লোকসান অন্যদিকে আগামী বছর আলু উৎপাদন না হওয়ার কারণে অনেক হিমাগার বন্ধ থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ৩০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে রফতানির সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
উদ্যোক্তারা দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ ও নতুন ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো কৃষিভিত্তিক হিমাগারশিল্পের বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ রিবেট-এর ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।