নিজস্ব প্রতিবেদক: এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ টেক্সটাইলের শেয়ারদর। প্রতি কার্যদিবসে এর শেয়ারদর বাড়ছে প্রায় দেড় শতাংশ। লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ারদর এভাবে বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও এর শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
গত এক মাসের লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর ধাপে ধাপে বাড়ছে। লোকসানি একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর এভাবে বাড়ার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষেরও। যে কারণে তারা প্রতিষ্ঠানটিকে শেয়ারের দর বৃদ্ধির
কারণ জানতে নোটিশ দিয়েছে। জবাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এরপরও থেমে নেই শেয়ারদর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য।
এক মাসে আগে এই শেয়ারের দর ছিল ১২ টাকা ২০ পয়সা। এরপর কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এক মাস পর অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার দিনশেষে এ শেয়ার লেনদেন হয় ১৫ দশমিক ৫০ টাকা। আর এ সময়ের মধ্যে মোট লেনদেন হয়েছে ২১ কার্যদিবস। ২১ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ দৈনিক গড় দরবৃদ্ধির হার এক দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে কারসাজিকারীদের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, একটি চক্র ইচ্ছে করেই এ শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। তা না হলে কোনো কারণ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর এভাবে বাড়তে পারে না। এ প্রসঙ্গে নাজমুল কবির রাসেল নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এক বছর আগে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ছিল অভিহিত দরের নিচে। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দরবৃদ্ধির কোনো সংবেদনশীল তথ্যও নেই। তারপর শেয়ারের দর অবিরাম বেড়েই চলছে। এর কোনো যুক্তি হতে পারে না। এ শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে’Ñবলে অভিযোগ করেন এ বিনিয়োগকারী।
অন্যদিকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কারণ ছাড়া দরবৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবেচনায়। আর্থিক ভিত্তি বা সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া এভাবে দর বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘যে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে হলে আগে ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দেখা উচিত। কারণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তারা শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্ন দেন। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আনা।’
এদিকে দর বাড়ার বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বস্ত্র খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৪৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।