হালা বটের তল

হালা বটের তল লালমনিরহাট শহরের একটি বিখ্যাত স্থান। প্রায় দুই একর জমিজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন এ বটগাছ। লালমনিরহাট-কুলাঘাট সড়কের বানিয়ার দীঘির উত্তর পাশে এর অবস্থান। গাছটির দক্ষিণ পাশের একটি ডাল প্রধান শাখা থেকে কিছু দূরে মাটিতে চাপা পড়ে আরও একটি বটগাছের সৃষ্টি করেছে। পশ্চিম অংশের কয়েকটি ডাল রাস্তার ওপর দিয়ে পাশের জমিকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। মূল বটগাছটির ওপরে আরও তিনটি গাছ যুক্ত রয়েছেÑপাইকর, আম ও বকুল ফুল।

গাছটির বয়স প্রায় ১৭৯ বছর। গাছের নিচের ঈদগাহ মাঠটি আরও পুরোনো। ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে এ মাঠে শুধু ঈদের নামাজ আদায় হতো কিন্তু মানতের কোনো ব্যাপার ছিল না। কথিত আছে, পাকিস্তান আমলে ১৯৫১-৫২ সালে স্থানীয় খতি ফকির জৈনপুরের জনৈক পীরসাহেবকে ওয়াজ করার জন্য এখানে এনেছিলেন এলাকাবাসী। পীরসাহেব গাছের নিচে বসে ওয়াজ করেছিলেন। ওজুু করার জন্য মাঠের পাশে একটি কুয়া খনন করা হয়েছিল। কিন্তু কুয়ার পানি অপর্যাপ্ত হওয়ায় ওজু করায় সমস্যা হয়। এতে পীরসাহেব এক ঘটি পানি নিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে কুয়ায় ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর আর ওজুর পানির অভাব হয়নি। ওয়াজ শেষে খিচুড়ি বিতরণের সময় কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে পীরসাহেব খিচুড়ির হাঁড়িতে ফুঁ দিয়ে হাঁড়ির মুখে ঢাকনা দেন। পরে তার নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকনা একটু সরিয়ে খিচুড়ি বিতরণ শুরু করা হয়। আগত লোকজনের মধ্যে বিতরণ শেষে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের লোকজনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় খিচুড়ি। পীরসাহেব ওয়াজ করে চলে যান। কিন্তু ওয়াজ করার মাঠটি এলাকার লোকজনের কাছে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হতে থাকে। একই সঙ্গে পীরসাহেবকে ছায়াদানকারী বটগাছটির প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানো শুরু হয়। এখানে এসে মানত করে সুফল পাওয়ার পর পাকিস্তান আমলেই মানতের প্রচলন শুরু হয়। এর ব্যাপকতা বাড়ে স্বাধীনতার পর। প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ মানতের উদ্দেশ্যে এখানে আসতে শুরু করে।

বর্তমানে বটগাছটি বিখ্যাত স্থান হিসেবে সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সুপরিচিতি। বটগাছকে কেন্দ্র করে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে প্রাচীর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঈদগাহ মাঠ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সব নারী-পুরুষের জন্য বসার ব্যবস্থা, ওজুখানা ও নামাজঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে একজন খাদেম নিযুক্ত রয়েছেন।

 

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত, লালমনিরহাট

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০