রতন কুমার দাস: হাজার বছরের বেশি সময় ধরে মানুষ সিরামিক ও সিরামিক সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। শতকের পর শতক ধরে বাহারি তৈজসপত্র ও অট্টালিকা নির্মাণের জন্য সিরামিকের ওপর নির্ভর করতেন ধনপতিরা। কালক্রমে সাধারণ মানুষের হাতে আসে তা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে দীর্ঘদিন আমদানি করা হতো সিরামিক পণ্য। সেই অবস্থা এখন অতীত; দেশেই একটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে সিরামিক খাত। শুধু তা-ই নয়, দেশের চাহিদা পূরণ করে রফতানিও করছেন উদ্যোক্তারা। সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারÑএ তিনটি শিল্পকে একসঙ্গে সিরামিক খাত বলা হয়। ক্রমবর্ধমান এ শিল্পের প্রসারে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অগ্রগণ্য সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এক্স সিরামিকস লিমিটেড। ইনডেক্স গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এক্স সিরামিকস লিমিটেড। শুরু থেকেই সৃজনশীল, দৃষ্টিনন্দন ও রুচিশীল পণ্য প্রস্তুতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি গুণগত মান ও ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বিভিন্ন ডিজাইনের নানা ধরনের টাইলস ও স্যানিটারি সামগ্রী রয়েছে তাদের, যা ক্রেতাসাধারণের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। সঙ্গত কারণে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এক্স সিরামিকস। প্রতিষ্ঠানটির সব পণ্য বিশ্বমানের। মূলত আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানি করার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পোরসেলিন ও সিরামিক টাইলস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এটি। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য প্রস্তুতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদ্ভাবনী শক্তি ও রুচির উৎকর্ষকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এখানে। সবকিছু ছাপিয়ে গ্রাহক বা ক্রেতার সন্তুষ্টিবিধানই তাদের মূল লক্ষ্য। তাই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের কারিগরি সহায়তায় তৈরি হয় সব ধরনের পণ্য। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সিরামিক খাতে নতুনত্ব পরীক্ষায় শতভাগ উতরে গেছে এক্স সিরামিকস।
বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যে অনন্য এক্স সিরামিকসের পণ্য। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক; আভ্যন্তরীণ কিংবা বহির্ভাগ সব ক্ষেত্রে মানানসই তাদের পণ্য। আকার, রং ও নজরকাড়া ফিনিশিং এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া সহজে পরিষ্কার হয় সব পণ্য। এসব পণ্যের স্থায়িত্ব অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই। সব পণ্যই ২০ বছরের অধিক সময় ধরে টিকে থাকে। টক্সিকমুক্ত সব পণ্য। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পানি, ময়েশ্চার ও তাপমাত্রার পরিবর্তন কিংবা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
পাঠক আগেই জেনেছেন, পরিবেশসম্মত উপায়ে পণ্য প্রস্তুত করে এক্স সিরামিকস। এজন্য তাদের কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে শিল্প এলাকায়। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রয়েছে এর কারখানা। যথাসময়ে পণ্য সরবরাহের জন্য চারটি লাইনে উৎপাদন কার্যক্রম চালানো হয়। উৎপাদনের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পরিবেশবান্ধব উপকরণ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করে আসছে তারা। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন পদ্ধতি এড়িয়ে চলে তারা। বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ সুবিধা রয়েছে। রিসাইক্লিং সুবিধাও রয়েছে এখানে। সব কারখানায় ক্লোরোফ্লোরো কার্বনমুক্ত শীতলীকরণ ব্যবস্থা, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, কার্বন নিঃসরণ কমানের জন্য এনার্জি প্লান্ট ও সৌরশক্তি কাজে লাগানো হয়।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটিকে অনন্য করে তুলেছে। কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ রেখেছে তারা। যথাসময়ে সব কর্মীর প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে তৎপর এ প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের বাজারে জনপ্রিয় ইতালিয়ান সিরামিকস টাইলসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বলা হয় এক্স সিরামিকসকে। প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছর পর ইতালির মনিকা ব্র্যান্ডের টাইলস আমদানি করে তারা।
ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন পরিচালক মাহিন মাজহার। যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ গ্লোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ফাইন্যান্সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পড়ালেখা সম্পন্ন করে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এর মধ্যে রয়েছে মেরিলিঞ্চ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, বেল সাউথ করপোরেশন, টিকনেট প্রভৃতি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন তিনি।
‘সিরামিক ও টাইলস আমদানি কমাতে চেষ্টা করছি, আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টিও এক্স সিরামিকসের লক্ষ্য। আমাদের প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে সবাইকে সঙ্গী করে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাক’
মাহিন মাজহার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক