শত বছরের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ। সংক্ষেপে এমসি কলেজ নামে পরিচিত। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘থিয়েটার মুরারিচাঁদ’।
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংস্কৃতিচর্চা আমাদের অঙ্গীকার’ সেøাগানে যাত্রা শুরু করে নাট্যসংগঠন থিয়েটার মুরারিচাঁদ। ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে থিয়েটারটি। শুরুতে মহড়া করত ছাত্রমিলনায়তন কিংবা রসায়নের গাছতলায়। পরে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট সংগঠনের প্রথম মঞ্চনাটক দূর-ঘটনা মঞ্চায়িত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক শিক্ষক। তৎকালীন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকমণ্ডলী অত্যন্ত আনন্দিত হন। তখন তারা থিয়েটারের চাওয়া পূর্ণ করার উদ্যোগ নেন। বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের মাধ্যমে নিজস্ব মহড়াকক্ষ বরাদ্দ হয়েছে। থিয়েটার মুরারিচাঁদ এখন পর্যন্ত ৯টি পথনাটক ও দুটি মঞ্চনাটকসহ মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া আবৃত্তির চারটি ও নৃত্যের পাঁচটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ করেছে।
এ বছরের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে থিয়েটার মুরারিচাঁদ। ২১ অক্টোবর ঢাকার সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব সেন্টারে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় শীর্ষ ১০ সংগঠনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
সম্প্রতি পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে থিয়েটার মুরারিচাঁদ। ডিসেম্বরের ৫ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই থিয়েটার মাতিয়ে রেখেছিল এমসি কলেজের সবুজ চত্বর। সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও উৎসবে অংশ নেয়। ক্যাম্পাসের জারুল তলায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের পর্দা উম্মোচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় থিয়েটার মুরারিচাঁদ ৬ ডিসেম্বর নগরীর টিলাগড়স্থ স্মৃতিফলক ও পুরো ক্যাম্পাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। সম্প্রতি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও তথ্যচিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে প্রদর্শন করে থিয়েটার। দুই দিন বিরতি দিয়ে ইন্টারেকটিভ থিয়েটারের আয়োজন করা হয়। ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর নিজেদের মহড়াকক্ষে মঞ্চনাটকের আয়োজন করে সংগঠনটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত অবধি চলে মঞ্চনাটক। ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস উদযাপন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসবের পর্দা নামে।
উৎসবে অংশ নিয়েছিল উদীচী, নটরনাট, ছন্দনৃত্যালয়, নৃত্যশৈলী, নান্দিক নাট্যদল, নাট্যলোক, থিয়েটার সিলেট, থিয়েটার বাংলা, মৃত্তিকায় মহাকাল, কথাকলি, নাট্যমঞ্চ ও নাট্যয়নসহ কলেজের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। শেষ দিনে সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয়
‘কোথায় হারাল বিপুল সম্ভাবনা
বিশ্বাস দেখি এখানে যে ক্রুশবিদ্ধ
উত্তরণের সরণি তাই তো খুঁজি
এখনই সময় হতে হবে যূথবদ্ধ’
চলতি বছরের নভেম্বরে থিয়েটারটি
রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী উদযাপন করে। থিয়েটারের পরিচালনা কমিটি দুটি। একটা কার্যনির্বাহী পরিষদ। আরেকটি সাধারণ পরিষদ। কার্যনির্বাহী পরিষদ কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত। আর সাধারণ পরিষদ থিয়েটারের কর্মীদের নিয়ে গঠিত। প্রতিবছর ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক বছরের জন্য পাঁচ সদস্যের সাধারণ পরিষদ কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত থিয়েটারের কর্মীরা আবৃত্তি, নাটক, গান ও নৃত্য অনুশীলন করেন।
কলেজের একমাত্র নাট্যসংগঠন হিসেবে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সদস্যপদ লাভ করেছে থিয়েটারটি। আহ্বায়ক ফাহমিদা এলাহি বৃষ্টি বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশ খুবই জরুরি। আমাদের মহড়াকক্ষ সব শিক্ষার্থীর জন্য খোলা। যারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে শামিল করতে চায় তারা যে কোনো সময় আসতে পারে। থিয়েটার মুরারিচাঁদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও নাট্যনির্দেশক ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। আমরা বিশ্বাস করি একমাত্র সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষকে জঙ্গিবাদ, কুসংস্কার ও সব অন্যায় থেকে দূরে রেখে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা যায়। কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্পাদক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামীমা আখতার চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক বাতায়নে সংগঠনের আবির্ভাব হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতোই। থিয়েটার মুরারিচাঁদ প্রযোজিত নাটক ওং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতার বার্তা শিক্ষার্থীদের প্রগতিশীল ও মুক্তবুদ্ধিচর্চায় প্রাণিত করছে।
আজহার উদ্দিন শিমুল